অধিকার চাওয়ার আগেই পাওয়ার নিশ্চয়তা চাই - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
লিখছে এআই, ঘুমাচ্ছে মস্তিষ্ক নবীজিকে কটূক্তির অভিযোগে বাবা-ছেলে আটক, উত্তপ্ত লালমনিরহাট সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের পর্যালোচনায় ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়? অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১২৫ দফা রাবি ছাত্রশিবিরের ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ট্রাম্প ভারতে নারীদের একাকী ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আকাশপথে আঘাত, পাতালে প্রতিরোধ: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাতের এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ মার্কিন হামলার পরও তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি: জাতিসংঘ পরমাণু সংস্থা (IAEA) ইউএস নিউজ বেস্ট গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে রাবির বড় অগ্রগতি

অধিকার চাওয়ার আগেই পাওয়ার নিশ্চয়তা চাই

মো. তবিউর রহমান
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
  • ১৩৪ বার দেখা হয়েছে
ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে কর্ণপাত না করায় পতন হয় হাসিনা সরকারের
ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে কর্ণপাত না করায় পতন হয় হাসিনা সরকারের

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করা অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যায্য-অন্যায্য বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন স্থানের আন্দোলন-সমাবেশের খবর যেন খুব স্বাভাবিক এখন। সাম্প্রতিক সময়ে ৭ কলেজ কেন্দ্রিক আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবীতে তিতুমীর কলেজ শাটডাউন ঘোষণা। আর পান থেকে চুন খসতেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন যেন ছেলের হাতের মোয়া। এসব আন্দোলনের দাবীর পক্ষে-বিপক্ষে জনমতও দেখা যায় নানা কারণে। কিন্ত দাবি যখন ন্যায্য অধিকার রক্ষার তখন আবার জনমত কীসের। স্বাধীন দেশে মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন হবে স্বাভাবিক নিয়মে, আন্দোলনের মাধ্যমে নয়। অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করা বরং এটাই প্রমাণ করে যে, ঐ অধিকারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়ত বোঝে না যে এটা অধিকার বা তারা সচেতন নয় অধিকারটির বিষয়ে অথবা অধিকারটি দিতে চায়না কিংবা অধিকারের বিষয়টি তারা স্বীকারই করে না। কর্তৃপক্ষের মনে করার কারণ যাই হোক না কেন,একটি স্বাধীন দেশের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে যদি রাস্তায় নামে, অনশন করে, অসুস্থ হয় এমনকি মৃত্যুবরণ করে এবং একই সাথে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায় ও দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে তা দেশ ও জাতির জন্য খুবই বেদনাদায়ক।

অধিকার আদায় বিষয়ক সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা হল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে আহতদের নিজেদের অধিকার আদায় করতেও আন্দোলন করার ঘটনা। তাদের এ অধিকার যেনতেন অধিকার নয় বরং সর্বোচ্চ শ্রেণীর অধিকার যেখানে তাদের প্রয়োজন প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা। দেশের মানুষের জন্য যারা তাদের শরীরের তাজা রক্ত ঝরালো, পঙ্গু হলো, মৃত্যুবরণ করল সেই তাদেরই বেঁচে থাকার অধিকারের জন্যও আন্দোলন করতে হয়, হায় আফসোস! গত ২ জানুয়ারি শাহবাগে তাদের অধিকার আদায়ের এমনই ঘটনা ঘটে। একই ইস্যুতে গত ২০ অক্টোবর, ২০২৪ আন্দোলন করেছিল জুলাই-বিপ্লবের আহতরা তাদের উন্নত চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য। এ বছরের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেও রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভিতরে সাড়ে চার ঘন্টা বিক্ষোভের পর সড়ক অবরোধ করে তারা আন্দোলন করে তাদের সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে।

আচ্ছা, আমাদের কর্তা-ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা কিংবা তাদের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গরা কি জানেন না যে, ঐসব আহতদের জন্য, আহত-নিহতদের পরিবারের জন্য কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, নাকি তারা সে বিষয়ে সচেতন নন, নাকি তারা তাদের অধিকার দিতে চান না অথবা এমনকি তা স্বীকারও করেন না?
জুলাই-আগস্টের সেই দিনগুলোতে কত মায়ের সাহসী সন্তান গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে আহত হওয়ার পরেও পলায়ন করেনি, নিহত হবে জেনেও পিছপা হয়নি,  বরং বীরদর্পে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। অধিকার আদায়ের পথ থেকে ফিরে আসেনি নিশ্চিত বিপদ জেনেও। তারা সাহস দেখিয়েছিল বলেই অন্যরা সাহস করে এগিয়ে গিয়েছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিক গতি ধরে রেখেছিল। তারা যদি অস্ত্র-গুলির ভয়ে পিছ-পা হত, আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যেত তবে অন্যরা হয়ত সাহস করত না আন্দোলন চালিয়ে যেতে, হয়ত সেদিনের বিজয়ও আসত না। যাদের আত্মত্যাগের কারণে দুঃশাসন থেকে মানুষ মুক্তি পেল তাদের নিজেদের অধিকারটুকু আদায় করতেও যদি তাদের নিজেদেরই আন্দোলন করতে হয় হুইল চেয়ারে বসে, হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে রাস্তায় এসে, তাদের একটু দেখতে আসার জন্য ও খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তবে অধিকারহরণকারী স্বৈরাচার সরকার আর অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে তফাৎ থাকল কোথায়? আন্দোলনে আহতরা ও নিহতের পরিবারেরা নিশ্চয় অসম্ভব কোনকিছু দাবী করে না বরং তাদের অধিকারটুকু চায়। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাশীল হলে চাওয়ার আগেই তাদের অধিকার পাওয়ার কথা। কারণ এটা তাদের অন্যায্য দাবি নয় বরং ন্যায্য অধিকার।

অধিকার সবসময় ন্যায্য পাওনাকে বোঝায় কিন্ত দাবি ন্যায্য/অন্যায্য যে কোনোটাই হতে পারে। অধিকার আদায়ে যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে তাতে আন্দোলন করাটাই হয়ত এক সময় অগ্রাধিকারের তালিকায় চলে আসবে। তখন কথায় কথায় আন্দোলন হবে, দেশ ও মানুষ বেশ বেকায়দায় পড়বে। জুলাই-বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাত্রাতিরিক্ত আন্দোলনের অবস্থা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। আন্দোলনের ফলে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, সময়, সম্পদ সমস্ত কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই আন্দোলন যদি সীমাবদ্ধ করা না হয় তবে ভবিষ্যতে এ আন্দোলনই হবে দেশের অগ্রযাত্রার পথে বিরাট এক বাধা। এজন্য যার যে অধিকার তা আগেই নিশ্চিত করা- যাতে ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য বৈধ আন্দোলনের অবকাশ না থাকে। অধিকার নিশ্চিত হলে যখন অধিকার বিষয়ক বৈধ আন্দোলন কমে যাবে তখন অন্যায্য দাবির পক্ষের আন্দোলন সহজে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আন্দোলন যদি অভ্যাসে পরিণত হয়, আন্দোলন যদি নাবালক প্রকৃতির ব্যক্তিদের দখলে যায়, আন্দোলন যদি আবেগতাড়িত অপরিণত বয়স্ক ছাত্রদের নেতৃত্বে যায় তবে যে কোনো ধরণের মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিতে পারে যে কোনো সময়।
উল্লেখ্য যে, কোটা সংস্কার নামক একটি দাবির জন্য সর্ব স্তরের মানুষ জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েনি, বরং তারা এসেছিল তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যারা সাধারণ মানুষের অধিকারকে তোয়াক্কা করেনি। যার ফলে সর্ব স্তরের মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল এবং বিজয় এসেছিল। একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সরকার যদি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিত এবং অতিমাত্রায় অহংকার প্রদর্শন না করত তবে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যেত। হয়ত আন্দোলন থেমে যেত, সরকার পরিবর্তন হত না আর অন্তর্বর্তী সরকারও আসত না। অতএব সরকার পতনে যতটা না ছাত্র-জনতার অবদান ছিল তার চেয়ে বেশি দায়ী ছিল সরকার নিজেই। তাই যখন যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যে বা যিনিই থাকুন না কেন তার অধীনস্থদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকলে তাদের ভবিষ্যতও ৫ই আগস্টের মতো হবে; হয়ত কিছু সময় আগে বা পরে। সরকারের অধীনস্থ জনগণের অধিকার, শিক্ষকের অধীনস্থ ছাত্রদের অধিকার, মালিকের অধীনস্থ শ্রমিকের অধিকার এভাবে নিজেদের অধীনস্থদের অধিকার রক্ষা করতে না পারার চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছু হতে পারে না। শুধু ব্যর্থতাই নয় বরং তাদের প্রজা-ছাত্র-শ্রমিকদের হাতে লাঞ্চনা ভোগ করার মতো অপমানজনক অবস্থার সম্মুখীন হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। ছাত্র সহ যার যেখানে যে অধিকার আছে তা বাস্তবায়ন করলে আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না, দেশ ও দেশের মানুষের দুর্ভোগেও পড়তে হবে না। তাই যে কোনো প্রকার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের আগেই নিশ্চিত হোক সে অধিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।
লেখক: কলামনিস্ট ও কর্পোরেট পেশাজীবী
ইমেইল: mtabiur_ku@yahoo.com

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT