
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হিজাব নিয়ে এক শিক্ষকের ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের প্রতিবাদে আল-কোরআন বুকে নিয়ে এবং আরবদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে ক্লাসে প্রবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে তিনি এ প্রতিবাদী পদক্ষেপ নেন।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, প্রত্যেক মানুষ তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পোশাক পরিধান ও ধর্মগ্রন্থ বহনের স্বাধীনতা রাখে। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি যে ধর্ম পালন করে, সে তার ধর্মের পোশাকের বিষয়ে স্বাধীন। আমি যদি একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামী বিধান অনুযায়ী পোশাক পরে এবং আল-কোরআন নিয়ে ক্লাসে যাই, সেটি আমার মৌলিক স্বাধীনতা।” তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সমাজের বিবেক হিসেবে বিবেচিত, তাই তাদের কাছ থেকে সমাজবিরোধী বা বিতর্কিত আচরণ প্রত্যাশিত নয়। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বিশ্বের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক মদ নিয়ে ক্লাসে যাবেন, এটা কোথাও অনুমোদিত নয়।”
এর আগের দিন সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়ার্টার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!”
এই পোস্টকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা হিজাব নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন এবং ওই শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। পরে সমালোচনার মুখে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পোস্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের এই প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তাঁর পদক্ষেপকে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারের বিষয়টি বিতর্কিত বলে মন্তব্য করেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।