
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জটিলতার পর অবশেষে সমঝোতার পথে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গণভোট, সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর (Proportional Representation) ব্যবস্থা এবং প্রতীকে শাপলা সংযোজন নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে গণভোটের রূপরেখা ও সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে আয়োজনের বিষয়ে আর কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রবিবার বলেন, “সংস্কারের পক্ষে যারা থাকবে না, তাদের সঙ্গে এনসিপি নেই।” এনসিপি ইতোমধ্যে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে।
অন্যদিকে, সরকারও এখন পূর্ণমাত্রায় নির্বাচনমুখী। রবিবার সরকারের পক্ষ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম ‘টিজার’ ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যা নির্বাচনী প্রচারণার সূচনা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই গণভোটে সংবিধান সংস্কার, উচ্চকক্ষ গঠন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা নিশ্চিত করার প্রস্তাব থাকবে বলে জানা গেছে।
তবে বিএনপি এখনো পিআর পদ্ধতির বিষয়ে আপত্তি জানাচ্ছে এবং জামায়াত চায় গণভোট আগে অনুষ্ঠিত হোক। সরকারের উদ্যোগে উপদেষ্টা পরিষদের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি কমিটি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য ও নির্বাচন কমিশন একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পক্ষে। এতে প্রশাসনিক ব্যয় ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “একই দিনে ভোট আয়োজন সরকারের জন্য কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত। আলাদা দিনে ভোট মানে নতুন ঝুঁকি ও অচলাবস্থা।”
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকের পর দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে গণভোট ও সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।