দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নবনির্মিত যমুনা রেলসেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আগামী মাসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে এই ট্রায়াল রানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের অবসান ঘটল।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় নতুন সেতু অতিক্রম করে। পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অন্যান্য ট্রেনও এই রুটে চলাচল করবে।
যমুনা রেলসেতুতে দুটি লাইন থাকলেও প্রাথমিকভাবে একটি লাইন ব্যবহার করেই উভয়মুখী ট্রেন চলবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান জানান, ১৮ মার্চ সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দুই লাইনে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আপাতত সেতুর উত্তর পাশের লাইন দিয়ে ঢাকা অভিমুখী ট্রেন চলবে।
নতুন সেতুর কার্যক্রম শুরুর ফলে একই দিন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুর কাঠামোতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি সীমিত করা হয়, যার ফলে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতুটি অতিক্রম করছে।
এই সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে নতুন একটি রেলসেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাক বিশিষ্ট ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে সরকার। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রকল্প শুরুর সময় সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় পৌঁছায়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ অর্থায়ন জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা থেকে এসেছে। এই বৃহত্তর রেলসেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে নির্মিত এই রেলসেতুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট ও লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের শুরুতে সেতুটির নামকরণ করা হয়েছিল “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু”। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এর নাম পরিবর্তন করে “যমুনা রেলসেতু” রাখা হয়।
Leave a Reply