আফগান রাজধানীতে রাতভর বিস্ফোরণ, টার্গেটেড অপারেশনে উত্তেজনা বাড়লো দুই দেশের সম্পর্কে; হামলার দায় এখনো স্বীকার করেনি কেউ

কাবুলের কেন্দ্র ও উত্তরাঞ্চলে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা রাতভর আকাশে যুদ্ধবিমানের শব্দ ও বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর ঘন ধোঁয়া উড়ছে এবং জরুরি সেবাকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কাবুলে কয়েকটি ছোট বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, তদন্ত চলছে। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলাটি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল এবং এটি ছোট বিস্ফোরণ নয়।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হামলাটি ছিল টিটিপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘নির্ভুল লক্ষ্যভেদী অপারেশন’। পাকিস্তান অবজারভার জানিয়েছে, কাবুলে নূর ওয়ালি মেসুদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে তার গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ক্বারি সাইফুল্লাহ মেসুদসহ কয়েকজন সহযোগী নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও আফগান সূত্রগুলো এসব দাবি যাচাই করতে পারেনি, ধারণা করা হচ্ছে নূর ওয়ালি গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ হামলার আগে থেকেই পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে টিটিপি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে ওই অঞ্চলে টিটিপির হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ১২ সেনা নিহত হয়। এরপর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে বলেন, “আর কোনো হামলা সহ্য করা হবে না।” তার এই মন্তব্যের একদিন পরই কাবুলে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী শুক্রবার সকালে পেশোয়ার কর্পস সদর দপ্তরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তান অবজারভার। সেখানে কাবুল হামলা বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, এই হামলা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এটি হবে পাকিস্তানের প্রথম সরাসরি কাবুলে বিমান হামলা—যা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে সংকটের মুখে ফেলতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, টিটিপি নেতৃত্বকে টার্গেট করে হামলা চালানো পাকিস্তানের নিরাপত্তা নীতির বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় আফগান সীমান্তে টিটিপি বা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে কাবুলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও অস্থির। আফগান কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে, অন্যদিকে পাকিস্তান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনাকে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন নিরাপত্তা অস্থিতিশীলতার সূচনা হিসেবে দেখছে।