বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে নির্মাণাধীন হলের ২য় তলার বারান্দার ঢালাই চলাকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে ১০ তলা ভবনটির ২য় তলার বারান্দার ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুপুরে বৃষ্টি হলে কাজ কিছু সময় বন্ধ থাকে। বৃষ্টি শেষে ঢালাইয়ের কাজ পুনরায় শুরু হলে ছাদের সাটারিং নড়বড়ে হয়ে পড়ে । এক পর্যায়ে সাটারিং ভেঙে সম্পূর্ণ ছাদ ধ্বসে মাটিতে পড়ে যায়। এতে নির্মাণকাজে থাকা শ্রমিকরাও নিচে পড়ে যান। পরে সেখান থেকে আহত ১২ শ্রমিককে উদ্ধার করা ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আহত ৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আহত শ্রমিকদের একজন বলেন, দুপুরের পর ঢালাই কাজ আবার শুরু হয়েছিল। তখন কাঠামো কিছুটা কাঁপতে থাকে, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো ঢালাইয়ের কাঠামো ভেঙে পড়ে। তার মতে, অন্তত ১০ জন শ্রমিক গুরুতরভাবে আঘাত পেয়েছেন—বিশেষ করে কোমর, হাঁটু ও পিঠে। ঘটনার সময় হালকা বৃষ্টিও হচ্ছিল বলে জানান অন্য শ্রমিকরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন ছাদ ঢালাইয়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী,ছাদের সাটারিংয়ে দুর্বল খুঁটি,লোহার পাইপের পরিবর্তে বাঁশ,পাটের দড়ি ব্যবহার,ঠিকাদারি প্রশাসনের গাফিলতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ তদারকির অভাবেই এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য হলের পোর্চের ঢালাই চলাকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।’ তবে নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, যেখানে লোহার খুঁটি থাকার কথা ছিল, সেখানে বাঁশ আর চিকন রড ব্যবহার করা হয়েছিল। এমনকি কাঠামো বাঁধতে পাটের দড়িও ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক শ্রমিক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত প্রকৌশলী মো. রাহাত হাসান দিদার বলেন, ‘সাটারিং সহ সবকিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়েছে। মূলত বৃষ্টির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
তবে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মোফাছিরুল ইসলামের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই দুর্ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ছয় সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানকে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন—ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, ড. মো. আশরাফুল আলম, মো. অলি উল্লাহ, সৈয়দ মোফাছিরুল ইসলাম এবং প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলাম (সদস্য-সচিব)। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকেও চার সদস্যের একটি পৃথক তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া। দলটি ২ আগস্ট ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে এবং পরবর্তী রিপোর্ট জমা দেবে।