ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের সীমান্ত ও যাত্রী চলাচলের পয়েন্টগুলোতে সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে বেনাপোল, আখাউড়া ও দেশের সব বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং থার্মাল স্ক্যানিং কার্যক্রম আরও কঠোর করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী ভারতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এবং সাব-ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। সেই ঝুঁকি বাংলাদেশেও রয়েছে। তাই সীমান্ত এবং যাত্রী চলাচলের পয়েন্টগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে, উপসর্গ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে এবং জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ভারতের কেরালা, গুজরাট এবং পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ভারতে ‘এনবি.১.৮.১’ নামের একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এজন্য দেশের প্রতিটি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তারদের উপস্থিতিতে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, বর্তমানে ভারতের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের শরীরে তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যাচ্ছে, তাদের আলাদা করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একইভাবে মাস্ক পরার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরে ইমিগ্রেশন মেডিকেল ডেস্কের কর্মকর্তারাও প্রতিটি যাত্রীর তাপমাত্রা যাচাই করছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী উপসর্গ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা এবং আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ।
দেশের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩ জন। মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। জুনের প্রথম আট দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন। শুধু তাই নয়, ৬ জুন ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক প্রবীণ ব্যক্তি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন জানান, গরমের সময় করোনার সংক্রমণ historically বেড়ে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবি জানায়, বর্তমানে ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি বাংলাদেশে বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। বিশেষ করে বয়স্ক, অসুস্থ এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য এগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা জরুরি।
এদিকে ঈদের ছুটি শেষে দেশব্যাপী সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কারণ, ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায় রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং ফেরিঘাটগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম হয়। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও ভাবা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে টিকাদান কার্যক্রম সীমিত হলেও বিদেশগামী যাত্রীরা টিকা নিচ্ছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, যারা এখনো করোনার টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কারণ, এই ভাইরাসের যেকোনো ভ্যারিয়েন্ট বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ হাজার ৫০০ জন। ২০২৪ সালে দেশে করোনায় কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে ২০২৩ সালে ৩৭ জন এবং ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং সচেতন থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। একইসঙ্গে সবাইকে মাস্ক পরিধান, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনে করোনার টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।