২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার জন্য কাগজ কেনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) প্রায় ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে নাম উঠে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের। অভিযোগ রয়েছে, এনসিটিবি ও সচিবালয়ের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব খাটিয়ে কাগজ কেনা ও তদবির বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, পাঠ্যবই পরিমার্জনের নামে প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে তানভীর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি চক্র এনসিটিবিতে সক্রিয় হয়। এই সুযোগে তারা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কাগজ শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করে। পরে সেই কাগজ প্রেস মালিকদের বাজার দরের চেয়ে প্রতি টনে ৫০ হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রায় ৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু আমদানিকৃত নয়, দেশীয় কাগজের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে বাণিজ্য করা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এনসিটিবির চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে তানভীর বোর্ডের কার্যক্রমে অলিখিত প্রভাব বিস্তার করতেন। এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সমঝোতায় নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান থেকেই কাগজ কেনায় বাধ্য করা হয় মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এনসিপি ২১ এপ্রিল গাজী তানভীরকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। একই চিঠিতে জেলা প্রশাসক নিয়োগে প্রভাব খাটানো ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগও উত্থাপন করা হয়।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদক মহাপরিচালক আখতার হোসেন জানান, গোপন তথ্য যাচাই শেষে আনুষ্ঠানিক তদন্ত চালানো হচ্ছে।
তানভীরের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত যাতায়াত এবং বদলির তদবির করার অভিযোগও উঠেছে। যদিও ১৩ মার্চ কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “এক পয়সার দুর্নীতির প্রমাণ মিললে আমি নিজেই দল ছাড়ব।”
তবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একটি টকশোতেও জেলা প্রশাসক নিয়োগে তিন কোটি টাকার চেক গ্রহণের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এনসিটিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এমন দুর্নীতির অভিযোগ শুধু প্রশাসনিক নয়, নীতিগত প্রশ্নও তৈরি করেছে।