
শাইখ মূসা আল হাফিয উপদেষ্টা মাহফুযের সাথে দেখা করে রাখাল রাহার ইস্যুটা যেভাবে ডিল করেছেন সেটা ঠিক হয়নি বলে মনে করি।
১) মাহফুযের সাথে যদি উনি ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটি থেকে দেখা করে থাকেন তাহলে এই আলাপটা প্রাইভেট রাখা উচিত ছিল। কারণ দেশব্যাপী যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে সেসবের অর্গানাইজিং এবং দাবি পেশ করার সাথে উনি সম্পৃক্ত বলে আমার জানা নেই। উনি মাহফুযের সাথে দেখা করতেই পারেন এবং করাই উচিত — কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। উনি আলোচনা করে যেভাবে ফটোশুট করে পোস্ট করেছেন তাতে মীমাংসামূলক একটা ভাব চলে আসে যেটা বাস্তবতাকে সঠিকভাবে প্রেসেন্ট করে না।
২) মাহফুযকে উনি যেভাবে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন সেটা একদমই অপ্রয়োজনীয় ও বেমানান ছিল। মাহফুয যদি তৌহিদী জনতাকে আশ্বস্ত করতে চায় সেটা সে নিজের কথা ও কাজ দ্বারা করে দেখাবে। ৫ অগাস্টের পর থেকে সে বারবার তৌহিদী জনতাকে ট্রিগার করেছে, সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কলোনিয়াল মাস্টারদের মতো হুমকিও দিয়েছে। পাবলিক অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে সৃষ্ট এসব ড্যামেজ কন্ট্রোলের দায়িত্ব তার, জনাব মূসা আল হাফিযের নয়। অনলাইনে বা মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে যারা রুমের ভেতরে গিয়ে ভিন্ন সুরে আলাপ করে — তাদের ক্যারেক্টার ইন্টেগ্রিটি নিয়ে কনসার্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে –। এরকম আমরা আগেও দেখেছি। পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিকে গুম-খুনের নির্দেশ দিত, অন্যদিকে কিছু আলিমদের সাথে বসে ‘আশ্বাস’ দিত ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
দুঃখিত, ঐসব দিন শেষ। মাহফুয বারবার ওপেনলি ব্লান্ডার করেছে, আপনার গোপন বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে তাকে ফরমাল স্টাইলে ‘ক্লিয়ারেন্স’ দিতে পারেন না। এরকম একটা কাজ এর আগে আরিফ আজাদও করেছিল। পলিটিশিয়ানদের সাথে কীভাবে ডিল করতে হয় এটা আমাদের অনেক ভালো মানুষ বোঝে না।
৩) একটা আন্দোলনের কিছু ইন্ট্রিকেসি আছে সেসব সম্বন্ধে শাইখ মূসা আল হাফিয অবগত নন বলে মনে হয়েছে। রাখাল রাহার দাবি সে পাঠ্যপুস্তক কমিটিতে নাই। তাহলে মাহফুয কীভাবে বলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে? কাগজ কই? যদি ফরমালি অব্যাহতি দেওয়া না হয়, যদি রিটেন ডকুমেন্ট না থাকে তাহলে মূসা আল হাফিয কীসের ওপর ভিত্তি করে পাবলিকলি অ্যানাউন্স করলেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে?
যদি রাখাল রাহা পাঠ্যপুস্তক কমিটির কাজে যুক্ত না-ই থাকে, তাহলেও কি সরকারের তার ব্যাপারে কিছু করার নেই? সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারে যে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে রাখাল রাহা-ই শুধু নয়, এরকম কোনো ব্যক্তিকেই আর কখনো নিয়োগ দেওয়া হবে না। এই লোককে নিদেনপক্ষে কোনো বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই সরকারি কাজকর্ম থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা উচিত, সেই ব্যাপারে মূসা আল হাফিয কি চার্জ করেছেন? এসব ইন্ট্রিকেসি ডিল করতে না পারলে কারো জন্য সমীচিন নয় শেয়ানা লোকদের সাথে এক টেবিলে বসে এসব ডিল করা।
৪) এ ধরণের ছবি-মিটিং দেখার পর জনমনে একটা ধারণা আসতে পারে, বিষয়টা সমাধা হয়ে গেছে। না, রাখাল রাহা জাস্ট একটা পোস্ট দিয়ে সরি বলবে, আর মাহফুয মুখে মুখে বলবে অব্যাহতি দেওয়া হয়ে গেছে – এখানেই বিষয়টা শেষ হতে পারে না। রাখাল রাহা যে মাত্রার অপরাধ করেছে, সে অপরাধের যথাযোগ্য শাস্তি এই সেকুলার সংবিধানে নেই। তবে এই সংবিধান অনুসারেও সে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। তাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করা ও সরকারের নিজ থেকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এই বিষয়ে তো বাংলাদেশে অতীতে অস্থিরতা কম হয় নি। সরকার কেন উদাসীনতা দেখাচ্ছে? আর জনাব মূসা কেন আগ বাড়িয়ে বিষয়টাকে ঝেড়ে ফেলছেন?
আর তৌহিদী জনতার কাছে তার মাফ চাওয়ার মতো করে মাফ চাওয়া উচিত। কীভাবে চাইবে, সেটা আমদের আলিমরা বলুক, যারা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করেছে তারা মতামত দিক। কোনো একজন গিয়ে নিজের মতো করে বিষয়টা ‘ডিল’ করে আসবে, এটা খুবই বেমানান, মূসা আল হাফিয এটা ঠিক করেননি।
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd