অর্থ না আদর্শ? নিউইয়র্কের নির্বাচনে বড় প্রশ্নের মুখে গণতন্ত্র - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
জাবিতে প্রাণ রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের নতুন কমিটি ঘোষণা বিদেশে নতুন আগত বাংলাদেশিদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ফজলে এলাহী সাবেক সেনাকর্মকর্তার জবানিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর প্রকৃত চিত্র কাতার–সৌদি মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত ‘আপাতত স্থগিত’ করল আফগানিস্তান পাকিস্তান আবারও আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে আফগান বাহিনী জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বালিয়াকান্দিতে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ক্লাস করতে এসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আটক কুবির তিন শিক্ষার্থী নোবিপ্রবি মডেল ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্সে পুরস্কার জয়ী রাজবাড়ীর কালুখালীর গুণী সংগীতশিল্পী জাহিদ হাসানের মৃত্যু

অর্থ না আদর্শ? নিউইয়র্কের নির্বাচনে বড় প্রশ্নের মুখে গণতন্ত্র

মো: মাহমুদুন্নবী, ইউএস প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
  • ১১৫ বার দেখা হয়েছে

নিউ ইয়র্ক সিটির ২০২৫ সালের মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি হঠাৎই জাতীয় রাজনীতির একটি প্রতীকী লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। একদিকে রয়েছেন প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো, যার পাশে দাঁড়িয়েছেন ধনকুবের ও সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ, আর অন্যদিকে আছেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রগ্রেসিভ প্রার্থী জোহরান মামদানি, যার পক্ষে মাঠে নেমেছে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক, শ্রমজীবী মানুষ আর তরুণ ভোটার। এই লড়াই শুধু একজন মেয়র নির্বাচনের নয়—এটি হয়ে উঠেছে অর্থ বনাম আদর্শের এক কঠিন প্রশ্ন।

মামদানির উত্থান নিউ ইয়র্ক শহরের রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি বিপরীত স্রোতের প্রতিনিধিত্ব করে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করে তিনি অ্যাস্টোরিয়া থেকে রাজ্য অ্যাসেম্বলি জয় করেছিলেন, আর আজ তিনি আছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শহরের মেয়র পদের দৌড়ে। তিনি প্রচার করছেন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে—যেখানে বাসাভাড়া ফ্রিজ থাকবে, শিশুরা পাবেন বিনামূল্যে ডে-কেয়ার, আর এই শহরের ধনী ও কর্পোরেটদের থেকে নেওয়া অতিরিক্ত করেই এসব সম্ভব হবে।

কিন্তু এই দর্শনের বিপরীতে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন নিউ ইয়র্কের করপোরেট ও ধনী মহল। Politico প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সাবেক মেয়র ব্লুমবার্গ তার ‘Common Sense NYC’ নামক সুপার পিএসি-তে কুয়োমোর পক্ষে অনুদান দিয়েছেন ৮.৩ মিলিয়ন ডলার। এই পিএসি ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে একের পর এক বিজ্ঞাপন, যেখানে মামদানির করনীতিকে চরম বামঘেঁষা ও ব্যবসাবিরোধী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই অর্থ দিয়ে শুধু টেলিভিশন নয়, ডিজিটাল মাধ্যমেও গড়ে তোলা হয়েছে এক ভয়প্রদর্শনমূলক প্রচার।

কুয়োমো নিজে সরাসরি মামদানিকে আক্রমণ না করলেও তার বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়, তিনি এই ‘উদারনৈতিক’ ঢেউকে এক প্রকার অবাস্তব পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন। তিনি WSJ-কে বলেন, “নিউ ইয়র্ক হচ্ছে বাস্তবের শহর। এই শহর চালাতে হলে অভিজ্ঞতা লাগে, শুধু স্বপ্ন নয়।” তার এই বক্তব্যের মাঝে আভাস আছে, মামদানির প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়, বরং বিপজ্জনক।

তবে মামদানির অবস্থান একদম বিপরীত। তার প্রচারশিবির বলছে, তারা বিগত তিন মাসে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার অনুদান পেয়েছে, যার গড় পরিমাণ মাত্র $২২। এই অনুদানের মধ্যে কর্পোরেটের এক ডলারও নেই। তার ভাষায়, “আমার প্রতিপক্ষের কাছে আছে বিলিয়নিয়ারদের অর্থ, আর আমার কাছে আছে মানুষ।”

এই “মানুষ বনাম মেশিন” লড়াই আরও জটিল হয়েছে নিউ ইয়র্কের র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং (RCV) ব্যবস্থার কারণে। এখানে একজন ভোটার একাধিক প্রার্থীর প্রতি পছন্দ প্রকাশ করতে পারেন। যার মানে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দও শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। Guardian-এর এক বিশ্লেষণ বলছে, মামদানির জন্য এটি বিশাল সুবিধা, কারণ যাঁরা ল্যান্ডারের মতো প্রগ্রেসিভ প্রার্থীকে প্রথম পছন্দ করছেন, তাঁদের অনেকেই মামদানিকে রাখছেন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পছন্দে। অর্থাৎ, যদিও কুয়োমোর ভোটার ঘাঁটি এখনো কিছুটা শক্ত, মামদানি ভোটার পছন্দের অনেক স্তরে প্রবেশ করতে পেরেছেন। শেষ মুহূর্তের পোলে মামদানি চলে এসেছেন কুয়োমর অনেক কাছাকাছি, প্রায় ৪৫-৫৫ ব্যবধানে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—অর্থ কি এখনও নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে? নাকি এই নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, যারা তৃণমূল থেকে উঠে এসে নীতি-ভিত্তিক রাজনীতি করছে, তারা সত্যিই জয়ী হতে পারে? নিউ ইয়র্কে নির্বাচনের প্যাটার্ন বলছে, ধনীদের অর্থ ও বিজ্ঞাপনের প্রভাব থাকলেও র‌্যাঙ্কড ভোটিং ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন অনেক সময় সেই প্রভাবকে পরাস্ত করতে পারে।

NY Magazine এই নির্বাচনের প্রেক্ষিতে লিখেছে, “মামদানি নিউ ইয়র্কের প্রথম প্রার্থী যিনি সুপার পিএসি’র টাকার বদলে মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে ভোট চাইছেন।” এই ধরনের রাজনীতি শুধু ‘বিকল্প’ নয়, আজকের শহুরে ভোটারদের কাছে হয়ে উঠছে আকর্ষণীয়।

তবে দ্বিধা এখানেই: অর্থ না আদর্শ—কার হাতে থাকবে শহরের রাশ? এই প্রশ্ন শুধু নিউ ইয়র্ক নয়, পুরো আমেরিকার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করছে। কারণ, সুপার পিএসি, ধনী অনুদানদাতা, এবং করপোরেট চাপ আজ গোটা মার্কিন গণতন্ত্রের নৈতিক ভিত্তিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

জুন ২৪ তারিখে যখন নিউ ইয়র্কবাসী ভোট দেবেন, তারা কেবল একজন মেয়র নির্বাচন করবেন না, তারা নির্ধারণ করবেন—গণতন্ত্রের পথ কোন দিকে যাবে। জনগণের শক্তি কি আরও একবার অর্থের আগ্রাসনকে থামাতে পারবে, নাকি অর্থই আবার নির্ধারণ করবে আগামী শহর কেমন হবে?

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT