বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছর – এই আইনের সংশোধনের দাবিতে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ভবনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষণ নয়, বরং ব্যভিচার। তবে বর্তমান আইনে এটি কেবল পুরুষের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
প্রধান অতিথি ডি এম সরকার (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, উপদেষ্টা – আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা) বলেন, “বাস্তবে নারী নির্যাতনের মামলার মাত্র ২% এর রায় হয়, বাকি ৯৮% মামলা প্রমাণিত হয় না।” তিনি পবিত্র কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের শাস্তির বিধান থাকলেও, বর্তমান আইন শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছে যা শরীয়া ও ন্যায়বিচার পরিপন্থী।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনের খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে ২০ মার্চ। এতে নির্দিষ্ট কিছু সংশোধনী আনা হলেও, বিয়ের প্রলোভনের অভিযোগে পুরুষের সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা যুক্ত করা হয়েছে, যা চরম বৈষম্যমূলক। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি প্রেমে প্রতারিত হন, তাহলে তিনি পুরুষকে মামলায় জড়াতে পারবেন। কিন্তু যদি কোনো পুরুষ প্রেমে প্রতারিত হন, তিনি নারীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করতে পারেন না। এটি আইনের অসমতাকে তুলে ধরে।”
আরও পড়ুনঃ
আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান (সুপ্রিম কোর্ট) বলেন,
“অনেক প্রেমের সম্পর্ক নারীরাও ভেঙে দেন। তাহলে কি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে পুরুষও ধর্ষণের মামলা করতে পারবে?”
“বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একটি সামাজিক ও নৈতিক বিষয়, কিন্তু তা আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা অসাংবিধানিক ও অযৌক্তিক।”
বক্তারা আরও বলেন, এই আইন ব্ল্যাকমেইলিং, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও মামলাবাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
নারী সহকর্মী বসের বিরুদ্ধে, ছাত্রী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিংবা যেকোনও নারী পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।
“নারীর পরিচয় গোপন থাকবে, কিন্তু পুরুষের পরিচয় প্রকাশ করা হবে। ফলে, নারীরা এই আইনের সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে পারে।”
“একই সম্পর্ক বারবার হলে, একজন নারী বিচ্ছেদের ১০ বছর পরেও মামলা করতে পারবেন।”
“এতে পুরুষরা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ ও নারী বিদ্বেষী হয়ে উঠতে পারেন।”
ডি এম সরকার (সাবেক জেলা ও দায়রা জজ)
সাইফুল ইসলাম নাদিম (সাধারণ সম্পাদক, এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন)
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান (আইন উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্ট)
ইফতেখার হোসেন (সহ-সভাপতি, ঢাকা জেলা কমিটি)
আমিনুল ইসলাম, ইয়াসির আরাফাত (সদস্য, ঢাকা জেলা কমিটি)
শাহ জালাল (সোনারগাঁও উপজেলা সভাপতি)
মহিউদ্দিন খোকন (সাধারণ সম্পাদক, সোনারগাঁও উপজেলা কমিটি)
এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ নয়, বরং ব্যভিচার হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানায়। তারা বলেন, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান শাস্তির বিধান রাখতে হবে, নয়তো এটি সমাজে আরও বড় সংকট সৃষ্টি করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সংবিধানের আলোকে আইন পুনর্মূল্যায়ন ও সংশোধনের দাবি জানান।