মাদারীপুরে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুটি পক্ষের মধ্যে চলমান কমিটি বিরোধের রেষ গিয়ে থেমেছে ছুরি-রক্ত আর বিক্ষোভের মধ্যে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলার এক কর্মী সভায় প্রকাশ্যে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে এনসিপির প্রতিপক্ষের কর্মীরা।
হামলার পরপরই মাসুম বিল্লাহকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখনও হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন এই ছাত্রনেতা।
ঘটনার পর রাতেই শহর জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মাদারীপুর সদর থানার সামনে জড়ো হন। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সুষ্ঠু বিচার না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এনসিপির নবগঠিত ৩১ সদস্যের জেলা কমিটি গঠন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তীব্র বিরোধ চলছিল। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন মাসুম বিল্লাহ ও আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহসহ ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এরপর জেলা কমিটির পাল্টা হিসেবে এনসিপির সদর উপজেলা শাখায় ২৬ সদস্যের আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির এক কর্মী সভায় মাসুম বিল্লাহকে অতিথি করায় ক্ষিপ্ত হন জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ হাসিবুল্লাহ। তার অনুসারীরা — রাতুল হাওলাদার ও আব্দুল্লাহ আদিল ওরফে টুটুলের নেতৃত্বে — হামলা চালিয়ে মাসুম বিল্লাহকে ছুরিকাঘাত করে।
এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি মাদারীপুর জেলা ও সদর উপজেলার দুটি নবগঠিত কমিটি স্থগিত করে এবং অভিযুক্ত দুই নেতা — রাতুল হাওলাদার ও আদিল মাহামুদ (টুটুল) — কে বহিষ্কার করে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত। এনসিপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে মধ্যরাতে পৃথক দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জানান, এনসিপির জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। মাসুম বিল্লাহসহ একাধিক ছাত্রনেতাকে কমিটিতে না রাখায় ক্ষোভ আরও বাড়ে। একাধিকবার হুমকি-ধামকির পর অবশেষে তা রক্তাক্ত সংঘর্ষে গড়ায়।
এদিকে সদ্য স্থগিত হওয়া জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ হাসিবুল্লাহ বলেছেন, অপরাধী যে-ই হোক, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। দলের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে কেন্দ্রীয় কমিটিও জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, কারা কী কারণে এ হামলা চালিয়েছে তা তদন্তাধীন। তবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অচিরেই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনায় মাদারীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক — সকলেই এ হামলার দ্রুত বিচার ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।