কিছুদিন আগের কলকাকলি স্টেশনের কথা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে? রাজশাহীর পুঠিয়ার সেই ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন ট্রেনের আদলে রঙ করেছিলেন তার স্কুল যা ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সারা দেশে। ভালো কাজ যেন একটু কমই সংক্রামক। নেতিবাচক কোনো কিছু যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, ইতিবাচক কোনো কিছুর বেলায় যেন তা গতি হারায়। একজন ভালো কিছু করলে তা দেখে মানুষ বাহবা দিতে কসুর না করলেও নিজেও কাজটির অনুসরণ করতে চায় না সহজে। কিন্তু এই ধারায় ব্যত্যয় ঘটালেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি চিলড্রেন পার্ক উচ্চ বিদ্যালয়স, লালমনিরহাট এর প্রধান শিক্ষক জনাব মো: আহসান হাবীব সরকার। আগে থেকেই তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা খেয়াল রেখে নিয়মিত খেলাধুলা ও প্রতিভা বিকাশমূলক বিভিন্ন আয়োজনে মাতিয়ে রাখতেন ছাত্র-ছাত্রীদের। তবে এবার সম্ভবত কলকাকলি স্টেশন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজের স্কুলকেও রেলের আদলে সাজালেন (রেলের স্কুলকে রেলের আদলে না সাজালে কি চলে?)
তবে কলকাকলী স্টেশনকে ছাড়িয়ে যেতেই কিনা জানি না, তাঁর স্কুলকে তিনি সাজিয়েছেন দুই ধরণের ট্রেনের আদলে; লাল-সবুজ ইন্দোনেশিয়ান কোচ ও লাল-সাদা ইরানি কোচ। তাঁর এই অভিনব আয়োজন নজর কেড়েছে সবার, প্রতিদিন স্কুল দর্শন ও পরিদর্শনে আসছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাঁকে। স্কুলের কিছু ছাত্রের সঙ্গে তাদের মনোভাব যাচাই করা হলো, তারাও এমন বর্ণিল আয়োজনে বেজায় খুশি!

ইরানি কোচের মতো করে রঙ করা স্কুলের দেওয়াল
এমন কাজ করার প্রয়োজনীয়তা হঠাৎ কেন পড়ল-এমন এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রধান শিক্ষক দৈনিক সাবাস বাংলাদেশকে জানালেন, কথায় আছে- আগে দর্শনধারী, তারপরে গুণবিচারী। স্কুলটি ভাঙাচোরা ছিল, যা দেখতে খারাপ লাগছিল। আমি তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় স্কুল মেরামতের ব্যবস্থা করি। এরপর সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে দুই ধরণের ট্রেনের কোচের আদলে স্কুলকক্ষের বারান্দার দেওয়াল রঙ করার ব্যবস্থা করি। আমি মনে করি একটি সুন্দর পরিবেশ ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক সুস্থ্যতার জন্য অত্যন্ত জরুরী।

লালমনিরহাট সিপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবীব সরকার
তাঁর সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেল, লালমনিরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী এই সরকারি স্কুল থেকে বের হয়েছে দেশের অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, বিচারক, এমনকি নাসার গবেষকও। অথচ কালের বিবর্তনে আজকে এই স্কুলের বেহাল দশা, দেখার যেন কেউ নেই। স্কুলে ২২ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৬ জন , ৬ জন কর্মচারীর বিপরীতে মাত্র ১ জন। আইনি জটিলতায় বহু বছর ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে নিয়োগ।
তবুও উদ্যমী এই প্রধান শিক্ষক তার সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন স্কুলটিকে, কারণ একদিন তিনি নিজেও ছাত্র ছিলেন এই স্কুলের। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও গতবছর শাওন হোসেন নামে একজন কৃতী শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
সচেতন মহলের দাবি, ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠকে প্রশাসনের গুরুত্বের নজরে দেখতে হবে, যেন আবারও আগের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে কৃতি শিক্ষার্থী বের হতে পারে এই স্কুল থেকে।
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd
Leave a Reply