১৬৫ বছরের পুরনো তাপ বিকিরণ সূত্র ভাঙলেন বাংলাদেশি গবেষক প্রমিত ঘোষ ও তার দল - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কুবির সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর কওমি ডিগ্রিধারীদের জন্য কাজী হওয়ার দরজা খুলল; আরও সরকারি খাত উন্মুক্তের দাবি সীমান্তে তীব্র গুলি বিনিময়, পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনা চরমে জাককানইবিতে সমুদ্র ও জলবায়ু–বিষয়ক ‘Exploring the Blue Earth’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দুধকুমার নদে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপ, স্বস্তিতে তীরবর্তী বাসিন্দারা ইবিতে জুলাই বিপ্লববিরোধী অভিযোগে ফের ৯ শিক্ষক বরখাস্ত নানিয়ারচর জোন (১৭ই বেংগল) এর মানবিক উদ্যো‌গে বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম নির্বাহী পরিচালক হলেন মো. সাদি উর রহিম জাদিদ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ইবিতে আলোচনা সভা জামায়াতের মনোনয়নে কে এই হিন্দু প্রার্থী

১৬৫ বছরের পুরনো তাপ বিকিরণ সূত্র ভাঙলেন বাংলাদেশি গবেষক প্রমিত ঘোষ ও তার দল

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ২৫৩ বার দেখা হয়েছে
নিজের গবেষণা টিমের সাথে বিজ্ঞানী প্রমিত ঘোষ (সর্বডানে)
নিজের গবেষণা টিমের সাথে বিজ্ঞানী প্রমিত ঘোষ (সর্বডানে)

তাপ বিকিরণের ১৬৫ বছরের পুরনো সূত্র ভেঙে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক দল। তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ভবিষ্যতে সৌরশক্তি সংগ্রহ, তাপ পরিবহন এবং ইনফ্রারেড সেন্সরে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটাতে পারে।

এই গবেষণাপত্রটি ২০২৫ সালের ২৩ জুন Physical Review Letters–এ প্রকাশিত হচ্ছে, যা জার্নালটির “Editors’ Suggestion” হিসেবেও মনোনীত হয়েছে।

এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী প্রমিত ঘোষ, যিনি বর্তমানে পেন স্টেটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করছেন। তাঁর গবেষণা বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীদের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।

১৮৬০ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী গুসটাভ কিরখফ একটি সূত্র দেন, যেখানে বলা হয়—একটি বস্তুর তাপ বিকিরণ ক্ষমতা ও শোষণ ক্ষমতা নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কোণে সমান হবে। এটাই Kirchhoff’s Law of Thermal Radiation

বিগত দশকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছিলেন, এই সূত্রটি ভাঙা সম্ভব। যদিও কয়েক বছর আগে এই সূত্র ভাঙার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছিল, কিন্তু তাতে শক্তিশালী ও ব্যবহারোপযোগী বৈষম্য দেখা যায়নি। তবে পেন স্টেট গবেষকদের আবিষ্কারে ০.৪৩ মাত্রার অসমতা (emissivity ≠ absorptivity) ধরা পড়েছে, যা এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিস্তৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্য জুড়ে কার্যকর।

গবেষক দল একটি নতুন মেটামেটেরিয়াল তৈরি করেছেন, যা মাত্র ২ মাইক্রোমিটার পুরু এবং পাঁচটি সেমিকন্ডাক্টর স্তর দিয়ে তৈরি। এই উপাদানটি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের অধীনে সাধারণ বস্তুগুলোর মতো আচরণ করে না—এটি বেশি তাপ বিকিরণ করে, কিন্তু কম শোষণ করে।

এই গবেষণার জন্য তারা তৈরি করেছেন একটি বিশেষ যন্ত্র—Angle-Resolved Magnetic Thermal Emission Spectrophotometer, যা নির্দিষ্ট কোণ ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তাপ বিকিরণ পরিমাপে সক্ষম। এই যন্ত্রটির সাহায্যেই এতটা শক্তিশালী “nonreciprocity” ধরা পড়েছে।

এই গবেষণা শুধু তাত্ত্বিক নয়, বরং ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও বহুবিধ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সৌরপ্যানেল সাধারণত সূর্যের আলো শোষণের পাশাপাশি কিছু তাপ আবার বিকিরণ করে। Kirchhoff-এর সূত্র অনুযায়ী, এই বিকিরণ ফিরিয়ে দিতে হয় সূর্যের দিকে, যা একরকম অপচয়। নতুন এই আবিষ্কারের মাধ্যমে সেই বিকিরিত শক্তিকে ভিন্ন দিকে পাঠিয়ে অন্য একটি প্যানেলে শোষণ করানো সম্ভব—ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দক্ষতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক হিসেবে প্রমিত ঘোষের নাম যুক্ত থাকায় এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞানী সমাজের জন্য এক গর্বের মাইলফলক। প্রমিত ও তাঁর দল আমাদের দেখালেন—নতুন চিন্তা, সাহসী পদক্ষেপ এবং সৃষ্টিশীল প্রযুক্তির মাধ্যমে শতাব্দীপ্রাচীন বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসও বদলে দেওয়া সম্ভব।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT