
আওয়ামী লীগের বিচার
ধানমণ্ডি ৩২-এর ফ্যাশিবাদী প্রতীক উৎখাতের পুরোটা সময় আমরা সক্রিয়ভাবে শামিল ছিলাম। কিন্তু আমরা তখনই জানতাম—এটাই যথেষ্ট নয়। আওয়ামী জাহেলিয়াত সম্পূর্ণভাবে উৎখাত করতে হলে শুধু প্রতীক ভাঙা নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধকরণ জরুরি।
এ কারণেই আমরা ভাবছিলাম, কারা এই কাজটি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
আমরা চেয়েছিলাম ধানমণ্ডি ৩২-এ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একটি জনতার মঞ্চ তৈরি করা যায় কি না।
বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল।
কয়েকজন আমাকে ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদি সম্পর্কে বললেন, তিনি আন্তরিক মানুষ।
যদিও পূর্বপরিচয় ছিল না, তবু ফোন করলাম, জানতে চাইলাম—আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধকরণে কি কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে?
ধানমণ্ডি ৩২-এ কি আমরা কোনো কর্মসূচী দিতে পারি?
তিনি জানালেন, তারা আপাতত বইমেলার স্টল নিয়ে ব্যস্ত, এবং এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো কর্মসূচী নেই।
বললেন, তাদের ফোরামের মিটিংয়ে আলোচনা করবেন।
পরদিন যোগাযোগ করলে জানালেন, তারা এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের বিচার এর দাবিতে নামছেন না, তবে পরে কিছু কর্মসূচী আসবে।
সম্ভবত জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে কর্মসূচীর কথা বলেছিলেন।
একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় একজন ফিগারের সাথেও কথা হয়েছে।
তিনি শহীদ মিনারের কর্মসূচীতে আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন, এবং আমরা সে আমন্ত্রণ গ্রহণও করলাম।
এরপর নানা ইস্যু আসলো। রাখাল রাহাকে মহান আল্লাহকে নিয়ে অশ্লীল গালি দিলো।
এ নিয়ে সারা দেশে তাওহিদি জনতার উদ্যোগে পর পর দুই সপ্তাহ আন্দোলন হল।
এ আন্দোলনগুলোতে সেক্যুলার কোন প্ল্যাটফর্মকে কোনোরকম সক্রিয় ভূমিকায় পাওয়া গেলো না।
কেউ কেউ হয়তো দায়সারা বিবৃতি দিল, কেউ সেটুকুও করলো না।
তাওহিদি জনতাকে কেউ শাঁসালো, কেউ হুশিয়ারি দিল, কেউ জুলাইয়ের হিস্যার কথা বললো। আর কেউ কেউ সরাসরি মব বানিয়ে দিলো।
তারপর বিভিন্ন মহল থেকে পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আমাদের নিয়ে নানা মিথ্যাচার করা হলো। অপবাদ দেয়ার চেষ্টা হলো।
বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও সেই সব মিথ্যা প্রচারণাতে লাইক-কমেন্ট করে সক্রিয় থাকলেন। অনেকে মিথ্যাচার ও প্রপাগ্যান্ডা শেয়ার করলেন।
আমরা লক্ষ্য করলাম, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সেক্যুলার প্ল্যাটফর্মে তাওহিদি জনতার প্রতি আচরণে এক ধরনের দ্বিচারিতা আছে।
কোন ইস্যুতে যখন সমর্থনের প্রয়োজন হয়, রাজপথে মোবালাইজেশনের প্রয়োজন দেখা যায় তখন তারা চান তাওহিদি জনতা সাথে থাকুক।
কিন্তু তাওহিদি জনতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যুতে তারা তাদের পাশে থাকতে নারাজ। তারা এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা পারলে এড়িয়ে যেতে চান।
আর সুযোগ বুঝে নানা প্রপাগ্যান্ডার প্রকল্পেও অনেকে সুর মেলান। সেক্যুলার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সাম্প্রতিক কিছু কর্মসূচীতে আমরা অংশ না নেয়ার অবস্থান গ্রহণের পেছনে এটি একটি অন্যতম কারণ।
মূলত যে কথা বলতে চেয়েছি তা হলো, আমরা বিশ্বাস করি, ৫ অগাস্টের পর প্রধান কাজ হওয়া দরকার ছিলো আওয়ামী জাহিলিয়াতের উৎখাত।
তখন না হলেও ৩২ ভাঙার সময় যে প্রেক্ষাপট ও জোয়ার এসেছিল সেটা ছিলো সেকেন্ড চান্স, কিন্তু সেটাকে কেউ কাজে লাগায়নি।
যদি তখন বিষয়টি আমলে নেওয়া হত, আজ উত্তরপাড়া থেকে হুমকি আসার প্রেক্ষাপট তৈরি হত না।
আওয়ামী জাহেলিয়াত
আমাদের অবস্থান পরিষ্কার: আমরা আওয়ামী জাহেলিয়াতের উৎখাতে বরাবরই ফ্রন্টলাইনে ছিলাম।
এটি আমাদের কওম ও যমীনের ভবিষ্যতের প্রশ্ন, এবং এখানে কোনো দ্বিধার সুযোগ নেই।
বিভিন্ন মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও আওয়ামী জাহেলিয়াত উৎখাতে পুরো সমাজের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়া জরুরী। এটিই জুলাইয়ের স্পিরিট।
কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হতে হলে কিছু মৌলিক নীতির স্পষ্টতা থাকা জরুরি:
* কওম ও যমীনের স্বার্থে কোনো বিষয়ে যুগপৎভাবে কাজ করেত হলে সমাজের বিভিন্ন শক্তির মধ্যে নূন্যতম বোঝাপড়ার সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।
* পারস্পরিক অবদান ও কর্মের নূন্যতম সম্মান ও স্বীকৃতির জায়গা থাকা জরুরী।
কিন্তু কারও মনোভাব যদি হয়, তারা প্রয়োজনের সময় সমাজের কোন অংশকে স্রেফ নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবে, তাহলে কারো জন্যেই তাদের আস্থায় নেয়া সহজ না, এবং তাদের সাথে কাজ করা সমীচিন না।
তাই, যদি সত্যিই বৃহত্তর ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে তা পারস্পরিক সম্মান ও স্বীকৃতির ভিত্তিতেই হতে হবে।
আমরা মনে করি, বস্তুত আওয়ামিলীগকে এদেশের জনগণ ৫ অগাস্টেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
এখন আন্দোলন করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে যারা তাদের ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা করছে।
বস্তুত জুলাই ম্যাসাকারে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের সকলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দেখানো অলসতার কুফল হলো আজ উত্তরপাড়ার হুমকি।
তাই আওয়ামিলীগের অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে হবে।
প্রশাসনের যারা আওয়ামীলীগের হয়ে অপরাধ করেছে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে।
ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত অপরাধের বিচারের পাশাপাশি দল হিসেবে দলগতভাবে আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধ ও বিচার করতে হবে।
যেসব রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিবর্গ, সামরিক বাহিনির অফিসাররা আওয়ামী পূনর্বাসনের কথা বলবে তাদেরকেও কোলাবোরেটার হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd