আগামী মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু আলোচিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনা অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান ঘিরে সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতার ঢল নামাতে আট জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার, যার সম্পূর্ণ ব্যয়—প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা—বহন করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রোববার, ৩ আগস্ট, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান অধিদপ্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ট্রেন ভাড়ার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সেদিনই রেল কর্তৃপক্ষ আটটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এসব ট্রেন নির্ধারিত ভাড়ার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে এবং তা যেন নিয়মিত রেলসেবায় বিঘ্ন না ঘটায়, সে দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে একটি ১৬ কোচের ট্রেনে ৮৯২ আসনের ব্যবস্থা থাকবে, যার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ টাকার কিছু বেশি। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ৮ কোচের ট্রেন আসবে ৭৩৬ আসন নিয়ে, যার জন্য ভাড়া ধরা হয়েছে ৭২,৫০০ টাকা। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসবে ১০ কোচের ট্রেন, ৫১০ আসনে যাত্রী পরিবহন করবে; এর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৬,৫০০ টাকা।
নরসিংদী থেকে ১২ কোচের একটি ট্রেনে ৬৫২ জন যাত্রী আসবেন, যার ভাড়া প্রায় ৯৫,০০০ টাকা। সিলেট থেকে ১১ কোচে ৫৪৮ আসনের ট্রেনের ভাড়া ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। রাজশাহীর ৭ কোচের ট্রেনেও ৫৪৮ আসনের ব্যবস্থা রয়েছে, যার জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রেনটি আসবে রংপুর থেকে—১৪ কোচে ৬৩৮ আসন, ভাড়া প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ফরিদপুরের ভাঙা থেকে ৭ কোচে ৬৭৬ আসনের ট্রেন আসবে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
রেলওয়ে জানায়, দূরবর্তী জেলা থেকে আসা ট্রেনগুলো—যেমন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট—ভোর বা রাতের দিকে ছেড়ে দেবে, যাতে দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো যায়। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরের ট্রেনগুলো দুপুরের আগেই ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। অনুষ্ঠান শেষে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সব ট্রেন নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবে।
এই ধরনের ট্রেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর আবেদনে যেভাবে ট্রেন ভাড়া দেওয়া হয়, এবার একটি সরকারি মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ এসেছে। আমরা টাকার বিনিময়ে ট্রেন দিচ্ছি।”
রেল কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানায়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় এবং এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। এর আগে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তির কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদল ২০ বগির একটি ট্রেন ভাড়া করে ১,১২৬ জনের আসন নিশ্চিত করে। ১৯ জুলাই, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা সমাবেশে অংশ নিতে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছিল, যার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
সবশেষে, রেল কর্তৃপক্ষ আবারও জানায়, কোনো দল কিংবা মন্ত্রণালয় নিয়ম মেনে আবেদন করলে এবং অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করলে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়—এটি রেলওয়ের দীর্ঘদিনের চর্চা।