দুই মাস আগের ঘটনা, জয়পুরহাটের ভাদসা ইউনিয়নের এক গোরস্তানে গাছের সঙ্গে নুর আলম নামের এক ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ দেখে জনমনে আতঙ্ক জেগে উঠল, তিনদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেই আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই তার এক মাস পর জানুয়ারির ২৯ তারিখ হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেল মাহমুদুল হাসান পিপাস নামক এক তরুণ। কদিন পর তার দেখা মিলল বটে, তবে গোরস্তানে; একইভাবে ঝুলন্ত অবস্থায়।
এমতাবস্থায় জনমনে যখন ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে, তখনও প্রশাসন নির্বিকার। এর ফলে ঘটে গেল আরেকটি দুর্ঘটনা। ০১ মার্চ সকালে চক দাদরা গ্রামে দেখা মিলল মফিজ নামের এক অটোচালকের ঝুলন্ত লাশের; পথের ধারে, ক্ষেতের পাশে গাছের ডালে দোল খাচ্ছে ।
প্রতিটা খুনের ক্ষেত্রে একটি কমন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন জয়পুরহাটের বাসিন্দারা: ভিক্টিমের শরীরে থাকছে ব্লেজার, পায়ে জুতা , ঝুলছে গাছের ডালে-মাটি থেকে অস্বাভাবিক উচ্চতায়; যা বলে দেয় যে এগুলো আত্মহত্যা নয়, বরং খুন করে ঝুলিয়ে দিচ্ছে কোনো আততায়ী।
বিষয়টি নিয়ে হুলস্থূল পড়ে গেছে জয়পুরহাটবাসীদের মনে, জনমনে তুমুল আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু বিকার নেই প্রশাসনের, এখনও শুরু হয়নি কোনো গোয়েন্দাগিরী-তদন্ত। জানা গেছে, আগের খুনগুলোও ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুনগুলো কে বা কারা করছে, কেন করছে, খুনি কি ব্যক্তিবিশেষ নাকি কোনো কিলার গ্রুপের সদস্য, এগুলো কি সাধারণ খুন নাকি সিরিয়াল কিলিং, কাকতালীয় নাকি পরিকল্পিত তা নিয়ে তদন্ত করার সবিশেষ প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এখনও প্রশাসনকে এই নিয়ে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এমনকি মিডিয়াগুলোরও মনোযোগ আশানুরূপ নয়।
এই নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখা গেল খুন হওয়া মাহমুদুল হাসান পিপাসের মামাতো বোন মাহবুবা আক্তারকে। জয়পুরহাটের হৃদয় হতে নামক এক ফেসবুক গ্রুপে মাহবুবা আক্তার পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, “এর পরের টার্গেট আপনি-আমিও হতে পারি…! আর কত গুলো লা* পাওয়া গেলে প্রশাসন একটু নজরে নিবে বিষয় গুলো। আজ আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না আমার এই শহরে, আগে যেখানে কোনো রকম ভয় রাতের বেলাতেও ছাড়া বাসা থেকে বের হতে পারতাম, এখন দিনের বেলা বের হতেও ভয় লাগে, এইভাবে আর কয় জন মায়ের বুক খালি হইলে প্রশাসন নজরে নিবে? এগুলা কি আসলেই স্বাভাবিক…! আপনাদের কাছে কি একটুও রহস্যজনক মনে হচ্ছে না?সবার কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।”