দেশের ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস (আইজিডব্লিউ) অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল। বিশেষ করে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে এটি সালমান এফ রহমানের একচ্ছত্র নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। আল জাজিরায় বহুল আলোচিত “অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স মেন”-এর প্রতিবেদক জুলকারনাইন সায়ের খানের ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি সবিস্তারে উঠে আসে।
জুলকারনাইন সায়ের খানের ফেসবুকে পাওয়া ২০২০-২০২৫ সালের পাঁচ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফোরামের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের নামে পরিচালিত ব্যাংক একাউন্টে জমা করতো। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই বিপুল অর্থ প্রায়শই একই দিনে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে স্থানান্তর করা হতো।
এই পাঁচ বছরে বেক্সিমকো কম্পিউটার লিমিটেডের একাউন্টে ২৪৯ বার, ডিজিকনের একাউন্টে ২৫ বার, গ্লোবাল ভয়েস টেলিকমের একাউন্টে ৪২ বার, ইউনিক ইনফোওয়ের একাউন্টে ১ বার, এবং বাংলা ট্র্যাক কমিউনিকেশনের একাউন্টে ২৫ বার অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ধরনের লেনদেনের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনো অস্পষ্ট। তবে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এটি কোনো বৈধ লেনদেন হতো, তাহলে সেটি স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হতো এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হতো। কিন্তু এখানে একটি নির্দিষ্ট চক্রের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানের বিষয়টি সন্দেহজনক করে তুলেছে।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,
আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের সদস্যরা কেন নিয়মিতভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করতো?
কেনই বা সেই অর্থ নির্দিষ্ট মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে পাঠানো হতো?
এই অর্থ কি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হতো?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি অর্থ পাচার বা অন্য কোনো অনিয়মের অংশ হতে পারে। ফলে এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন, যাতে এই লেনদেনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসে।
যেহেতু এই অর্থ লেনদেনের সাথে দেশের গুরুত্বপূর্ণ টেলিকম অপারেটর ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাই বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।
এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, নাকি এটি সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে।