দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উগ্রপন্থি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের যেকোনো প্রচারণা কঠোর হাতে দমনে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি)। সম্প্রতি এক জরুরি নির্দেশনায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল স্কুল এবং কারিগরি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—এই নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন কিংবা এ জাতীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের যেন কোনোভাবেই ভ্রান্ত ধর্মীয় মতাদর্শে প্রভাবিত করা না যায়, সেজন্য নিয়মিত কোরআন-হাদিসের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা তুলে ধরার ওপরও বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরও।
বুধবার (৯ জুলাই) বিটিইবির পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়—যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের চরমপন্থি সংগঠনের প্রচারণা কিংবা সন্দেহজনক তৎপরতা পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোরআন ও হাদিসের সঠিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদ-চরমপন্থা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে এবং সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।
শুধু উগ্রবাদ নয়, কারিগরি শিক্ষাঙ্গনে মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরিতেও নেওয়া হয়েছে নতুন কর্মসূচি। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মাদকের ভয়াবহ কুফল এবং সামাজিক বিপর্যয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নিয়মিত প্রচারণা চালাতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন, কমিউনিটি পুলিশিং এবং সিভিল সোসাইটিকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে গঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটিগুলোকেও আরও সক্রিয় ও কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির দায়িত্ব হবে প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ নিরাপদ রাখা, সন্দেহজনক আচরণ বা কার্যক্রম শনাক্ত করা, শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনলাইনে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি দেশের কয়েকটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রচারণার আলামত পাওয়ার পরই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে এমন পদক্ষেপে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। অভিভাবক মহলের ভাষ্য, ‘শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা থাকতে হবে, তবে সেটা যেন সঠিক ব্যাখ্যা ও মানবিকতার শিক্ষা হয়। এই উদ্যোগ তাই প্রশংসার যোগ্য।’