গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের জন্য রেড ক্রসের মাধ্যমে খাবার পাঠাতে শর্তসাপেক্ষে সম্মতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ৩ আগস্ট রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসরায়েল যদি গাজায় একটি স্থায়ী মানবিক করিডোর চালু করে এবং ত্রাণ বিতরণের সময় বিমান হামলা বন্ধ রাখে, তাহলে তারা রেড ক্রসের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত থাকবে।
এ বিবৃতির পেছনে রয়েছে সম্প্রতি হামাস প্রকাশিত একটি ভিডিও, যা বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভিডিওটিতে গাজায় একটি সংকীর্ণ কংক্রিট সুড়ঙ্গে বন্দি এক ইসরায়েলি যুবককে দেখা যায়, যিনি শারীরিকভাবে চরম দুর্বল, গায়ে কোনো জামা নেই, শুধু প্যান্ট পরা এবং স্পষ্টত অপুষ্টিতে ভুগছেন বলে মনে হয়েছে। ওই যুবকের নাম এভিয়াতার ডেভিড, যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার দিন দক্ষিণ ইসরায়েলের নোভা সঙ্গীত উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে আটক হন এবং গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ভিডিওটি প্রকাশের পর ইসরায়েল ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় হামাসের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ইসরায়েল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে আনুমানিক ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এ পর্যন্ত হামাস কোনো আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাকে এসব জিম্মিদের কাছে পৌঁছাতে দেয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এভিয়াতার ডেভিডের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা বিশ্বজুড়ে চাপ সৃষ্টি করেছে এবং হামাসের বিবৃতিও সেই আন্তর্জাতিক চাপের ফলেই এসেছে। তবে হামাসের দাবি অনুযায়ী, গাজায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা, যাতে বোমা হামলা ও অবরোধ বন্ধ করা হয় এবং সহায়তার পথ সুগম হয়।
গাজা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, যেখানে মানবিক সংকট, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং বন্দিদের করুণ অবস্থার চিত্র একে একে সামনে আসছে। এই পটভূমিতে হামাসের শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাব ভবিষ্যতের আলোচনায় কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও পর্যবেক্ষণ চলছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।