
ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থানের কারণে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের বাজারে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অস্থিরতা। এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারেও। টানা ছয় দিনে চার দফায় ভরিতে ২৩ হাজার টাকার বেশি কমেছে সোনার দাম।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, বুধবার থেকে কার্যকর নতুন দরে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ২ হাজার ৭০৯ টাকায়। মাত্র একদিন আগেই এই মানের সোনার দাম ছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকা—অর্থাৎ এক দফায় ভরিতে বেড়েছে ৮ হাজার ৯০০ টাকা।
গত ২০ অক্টোবর দেশে ভরিতে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায় উঠে ইতিহাস গড়েছিল ২২ ক্যারেট সোনার দাম। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চার দফায় ভরিতে ২৩ হাজার ৫৭২ টাকা কমেছে এই দামের ধাতু।
২২ অক্টোবর এক দফায় কমানো হয় ভরিতে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা, ২৬ অক্টোবর কমে আরেক হাজার ৩৮ টাকা, এরপর ২৭ অক্টোবর কমে ৩ হাজার ৬৭৪ টাকা, আর সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমানো হয় ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা।
এ নিয়ে টানা ছয় দিনে স্বর্ণের দামে রেকর্ড দরপতন হলো দেশে।
শুধু দেশ নয়, বিশ্ববাজারেও একই চিত্র। গত ২০ অক্টোবর প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড ৪ হাজার ৩৫০ ডলারে উঠেছিল। কিন্তু সপ্তাহ না গড়াতেই দাম নেমে এসেছে ৪ হাজার ডলারের নিচে।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় প্রতি আউন্স সোনার দর দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৬৩ ডলার ৯৫ সেন্ট, যা একদিনে ১ শতাংশের বেশি কমে যাওয়ার ঘটনা।
বছরজুড়ে স্বর্ণের দাম প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়ে গেলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির তথ্য, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নীতি ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএলএস) সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বেড়েছে ০.৩ শতাংশ; ফলে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশে।
এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। একদিকে অনেকে স্বর্ণে বিনিয়োগ কমাচ্ছেন, অন্যদিকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে আবার কেউ কেউ নতুন করে ক্রয়ের দিকেও ঝুঁকছেন।
নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদার লং বলেন,
“৩ শতাংশে ফিরে আসা এক ধরনের মানসিক সীমারেখা। এটি দেখায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়।”
বাজুসের নতুন ঘোষণায় ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৬ টাকা,
১৮ ক্যারেটের দাম ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৫ টাকা।
তবে রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বাজুসের তথ্য বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৭০ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে—এর মধ্যে ৪৮ বার বেড়েছে, কমেছে ২২ বার। গত বছর পুরো বছরে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার।
জেনার মেটালসের সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিস্ট পিটার গ্রান্ট বলেন,
“যে মৌলিক কারণগুলো স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে—যেমন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়—সেগুলো এখনো বিদ্যমান। সাময়িক পতন বিনিয়োগকারীদের লাভ তোলার কৌশল মাত্র।”