আল জাজিরার একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের কারণে মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেখানকার জনগণ অনাহারে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে। গাজার সরকার মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ৬০০ ট্রাক ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন, কিন্তু ইসরায়েল সোমবার মাত্র ৯৫টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, যা প্রয়োজনের মাত্র ১৫ শতাংশ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন শিশু নিহত হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় এ পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৯৪ জন শিশুসহ মোট ১৮৮ জন অনাহারে মারা গেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী মানবিক সহায়তা প্রত্যাশীদের উপরও হামলা চালাচ্ছে। গত সোমবার ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন সাহায্যপ্রার্থী নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। গত মে মাসের শেষ দিক থেকে ‘জিএইচএফ’ (গাযা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন) ত্রাণ বিতরণের স্থান স্থাপন করার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১,৫৬৮ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বারবার সতর্ক করলেও, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় যতটুকু ত্রাণ সহায়তা ঢুকছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় ‘সাগরে এক ফোঁটা জলের মতো’ অপ্রতুল। এর ফলে, গাজার জনগণকে অনাহার ও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল ‘জিএইচএফ’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থাকে গাজায় ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দিয়েছে, যা একটি মার্কিন-ইসরায়েলি সমর্থিত গোষ্ঠী। মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং বিশেষজ্ঞরা এই ‘জিএইচএফ’কে ইসরায়েলি কৌশলের অংশ বলে মনে করছেন, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণকে দক্ষিণে ঠেলে দেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত গাজা উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করা। মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এর একজন ফেলো বলেছেন, ইসরায়েলের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গাজার ভৌত ধ্বংস এবং ফিলিস্তিনি সমাজের পরিকল্পিত পতন ঘটানো।
ইসরায়েলের এই যুদ্ধ কৌশল, যা মানবিক সহায়তা প্রাপ্তিতে বাধা দিচ্ছে এবং সাহায্যপ্রার্থীদের উপর হামলা চালাচ্ছে, গাজার জনগণের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই মানবিক সংকটের সমাধানে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।