ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত নিরীক্ষায় মুখোমুখি অবস্থানে আইসিএবি ও আইসিএমএবি - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
২০ জুলাই বিইউপিতে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান মসজিদ উদ্বোধনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে খতিবের মর্মান্তিক মৃত্যু দক্ষিণ কোরিয়ায় টানা ভারী বর্ষণে মৃত ৪, নিখোঁজ ২, হাজারো মানুষ গৃহহীন ইসরায়েল ‘সমস্ত বন্দিমুক্তির প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করেছে, দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতির ঘোষণা হামাসের মিঠুনের পা ছোঁয়া, মোদির জড়ানো—দুর্গাপুরে এক অভিনব নাট্যচিত্র ঢাকা শহরের বুকে ‘চাপাতি হাতে ছিনতাই’, নীরব ছিল জনতা ও পুলিশ সোহরাওয়ার্দীতে জামায়াতের মহাসমাবেশে লাখো জনতার ঢল, শৃঙ্খলা-পরিকল্পনায় নজিরবিহীন উদাহরণ ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ‘টর্চ লাইট’ মিছিল, তদন্তের দাবিতে স্লোগানে মুখর ক্যাম্পাস শেকৃবিতে ‘জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন’ শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল জাবি ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি তুর্য, সম্পাদক নোমান

ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত নিরীক্ষায় মুখোমুখি অবস্থানে আইসিএবি ও আইসিএমএবি

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫
  • ৩২ বার দেখা হয়েছে
আইসিএবি'র সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন, ছবি: সংগৃহীত
আইসিএবি'র সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন, ছবি: সংগৃহীত

দেশের নিরীক্ষা খাত এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে রয়েছে খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নিরীক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, অন্যদিকে নিরীক্ষার অধিকার ও কার্যপরিধি নিয়ে দেশের দুই শীর্ষ পেশাদারী সংস্থা ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)-এর মধ্যে চলছে তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ। সম্প্রতি দুটি সংস্থার পাল্টাপাল্টি প্রেস ব্রিফিং ও বিবৃতি এই বিরোধকে প্রকাশ্য রূপ দিয়েছে, যা এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের ‘অডিট সংকট’। আইসিএমএবি বলছে, এই সংকট বাস্তব এবং এর মূল কারণ পর্যাপ্ত নিরীক্ষকের অভাব। তাদের মতে, প্রায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং ৩ লাখের বেশি নিবন্ধিত কোম্পানির জন্য আইসিএবির মাত্র ৬০৯ জন নিরীক্ষক যথেষ্ট নন। এই সক্ষমতার ঘাটতিই আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব তৈরি করছে। আইসিএমএবির প্রেস নোটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “অডিট সংকট বাস্তব এবং সর্বজনবিদিত। তথ্যসূত্র নিয়ে আইসিএবির অহেতুক ঘাটাঘাটি এই সত্য থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা।”

অন্যদিকে, আইসিএবি এই ‘সংকট’ তত্ত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে। তাদের মতে, সমস্যা সংখ্যার নয়, বরং ব্যবস্থার। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিএবির সাবেক সভাপতি মো. ফোরকান উল্লাহ এক বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে লুটপাটের তথ্য জেনেও তারা প্রকাশ করতে পারেননি। তার ভাষায়, “আইনের বাধা আর বিভিন্ন চাপের মুখে নিরীক্ষকদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল।” এই বক্তব্যের সমর্থনে উপস্থিত অন্যান্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “আমাদের কারো ঘাড়ে একাধিক মাথা নেই যে আমরা সব ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশ করব।”

এই বক্তব্য একদিকে যেমন নিরীক্ষকদের অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরে, তেমনি আইসিএমএবির অভিযোগের আঙ্গুলটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকিং খাতের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। আইসিএবি প্রকারান্তরে বলছে, সংকটটি নিরীক্ষকের অভাবে নয়, বরং স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার কারণে।

আইসিএমএবি তাদের প্রস্তাবে নিরীক্ষার বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, পাবলিক ইন্টারেস্ট এন্টিটি ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যেমন—এনজিও, অংশীদারি ও একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষার দায়িত্ব সিএমএ পেশাজীবীদের দেওয়া হোক। তাদের যুক্তি, এটি বৈশ্বিক অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এতে নিরীক্ষার আওতা বাড়বে। এই দাবিকে তারা ‘প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখল’ হিসেবে না দেখে ‘সক্ষমতা বৃদ্ধি’ হিসেবে বর্ণনা করছে।

এর জবাবে আইসিএবি নিজেদেরকে দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নিরীক্ষক তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরেছে। তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, কেবল তারাই আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইএফএসি)-এর মানদণ্ড অনুসরণ করে, যা তাদের সদস্যদের বিশ্বমানের যোগ্যতা দেয়। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাইছে, নিরীক্ষার মতো একটি সংবেদনশীল দায়িত্ব পালনের জন্য যে মানের প্রয়োজন, তা কেবল তাদের সদস্যদেরই রয়েছে।

আইসিএবি এখানেই থেমে থাকেনি। তারা আইসিএমএবির দিকে পাল্টা আঙুল তুলে বলেছে, কোম্পানি আইন অনুযায়ী ‘কস্ট অডিট’ করার সুযোগ থাকলেও আইসিএমএবি তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অর্থাৎ, নিজেদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন অন্যের পরিসরে প্রবেশ করতে চাইছে—এমন একটি বার্তা দিতে চেয়েছে আইসিএবি।

দুটি সংস্থার পাল্টাপাল্টি অবস্থান এই বিরোধকে আরও নাটকীয় করে তুলেছে:

১. দায় চাপানো: আইসিএমএবি যখন নিরীক্ষকের ঘাটতিকে দায়ী করছে, তখন আইসিএবি ব্যাংক খাতের ব্যর্থতার দায় সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিতে হয়েছে।

২. যোগ্যতার প্রশ্ন: আইসিএবি নিজেদের আন্তর্জাতিক মান ও প্রশিক্ষণের কথা বলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করছে। অন্যদিকে, আইসিএমএবি বলছে, আইসিএবি মূল সমস্যা (সক্ষমতার সংকট) এড়িয়ে গিয়ে যোগ্যতা ও তথ্যের মতো অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে।

৩. প্রস্তাব ও পাল্টা প্রস্তাব: আইসিএমএবি নিরীক্ষা বাজার সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। এর বিপরীতে আইসিএবি কস্ট অডিট শক্তিশালী করতে আইসিএমএবিকে ‘সহায়তার’ প্রস্তাব দিয়েছে, যা এক ধরনের পেশাগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আইসিএবি বলছে, “চলুন, পেশাকে রাজনীতিমুক্ত রাখি।” আর আইসিএমএবি ডাক দিয়েছে, “সকলের সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের।” কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে পেশাগত রাজনীতির উত্তাপই স্পষ্ট। এই বিরোধ কি কেবলই দুটি পেশাদারী সংস্থার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে দেশের আর্থিক খাতের গভীরতর সংকট? উত্তর যা-ই হোক, এই প্রকাশ্য বিরোধ দেশের নিরীক্ষা ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে আরও একবার বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এখন বল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিশেষ করে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি), অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোর্টে। তাদের হস্তক্ষেপই নির্ধারণ করবে এই নাটকীয়তার শেষ কোথায়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT