প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবকে নিয়ে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক চাঞ্চল্যকর পোস্ট দিয়েছেন আলোচিত সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ওরফে সামি।তিনি তার নামে অভিযোগ এনেছেন সাংবাদিকের স্বাধীনতা খর্ব করার।
তার পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে দেওয়া হলো:
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে এই বিটের একাধিক সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য পাওয়ার স্বাধীনতা খর্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। নিজ নিজ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পাশাপশি, তারা আমাকে তথ্য দেন, এমন সন্দেহ এবং অভিযোগে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারে ঐ সাংবাদিকদের প্রবেশে মৌখিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন ফয়েজ তৈয়্যব। একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টারের দুইটি নম্বর নিজের বিদেশি নম্বরের হোয়াটস অ্যাপে ব্লক করেছেন তিনি। ফলে সংবাদ প্রকাশের প্রয়োজনে ফয়েজ আহমেদের কমেন্ট নিতে পারেন না ঐ রিপোর্টার।
আরেকটি জাতীয় দৈনিকের আরেক প্রতিবেদককে সম্প্রতি আইসিটি টাওয়ারের পঞ্চম তলায়, নিজ কার্যালয়ের বাইরে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) এবং নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সামনে অপদস্ত করা হয়। এই ফ্লোরের দক্ষিণ অংশে বিশেষ সহকারীর দপ্তর, তার সম্মেলন কক্ষ, তার কাছে আগত অতিথিদের ওয়েটিং রুম, একান্ত সচিব, পিআরও, এপিএস এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের দপ্তর রয়েছে। কার্যালয়ের এই সকল অংশের বাইরে কাচের দরজা দিয়ে, ফিঙ্গার লক চালু করেছেন ফয়েজ আহমদ। গণমাধ্যম কর্মীরা পিআরও এর সাথে দেখা করতে চাইলেও, দরজার বাইরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকে আগে নিজের পরিচয় দিতে হবে, এবং ভেতরে ফয়েজ আহমদের নিজস্ব কর্মকর্তারা অনুমতি দিলে, তবেই সেই গণমাধ্যমকর্মীকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এই নব্য স্বৈরাচারী ব্যবস্থা পলক বা জব্বারের সময়েও ছিল না।
কাচের দরজার বাইরের নিরাপত্তা রক্ষী, পিআরও এবং আইসিটি ভবনের নিচের অভ্যর্থনা কক্ষের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা – কর্মচারীদের ঐ ৫ সাংবাদিকদের প্রবেশে বাঁধা দেওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা এমন সংবাদ করেন যা ফয়েজ আহমদের পছন্দ হয় না এবং তারা আমাকে তথ্য দেন বলে ফয়েজের সন্দেহ।
ভার্বাল এমবারগো এর মধ্যে একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন বিভাগের প্রধান, ইনডিপেনডেন্ট সাংবাদিক এবং দুটি অনলাইন পোর্টালের সিনিয়র রিপোর্টারও রয়েছেন।
শুধু তাই নয়, এই সাংবাদিকরা যেন কোন বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ না পান, সেগুলোর তথ্য না পান; সেজন্য পিআরও কে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে। এই নির্দেশনার আলোকে সেসব তথ্য উন্মুক্তভাবে যেমন মেসেঞ্জার এবং হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে শেয়ার না করে, ব্যক্তিগতভাবে জানানো হয়।
চলমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ আইসিটি ও টেলিকম বিষয়ক সংবাদে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ফয়েজ তৈয়বের বক্তব্য যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি দৈনন্দিন তথ্য থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা স্পষ্টত একজন পেশাদার সাংবাদিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে হরণ করার শামিল।
কোন সাংবাদিককে যদি ফয়েজ আহমদ পছন্দ না করেন, সেজন্য তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেন না। সাংবাদিকরা সংবাদের কাজেই তার সাথে যোগাযোগ করতে চান। ঐ ৫ সাংবাদিক দাবি করেছেন যে, তারা কখনও ফয়েজ তৈয়বকে কোন তদবির করে, তার কাছে কিছু চেয়ে কখনও যোগাযোগ করেননি। তাহলে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য পাওয়ার অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে? ব্যক্তিগত ইস্যু কেন প্রোফেশনাল জায়গায় আনা হচ্ছে?
জানা যায়, ঐ ৫ সাংবাদিকের বিষয়ে ফয়েজ তৈয়বকে নেতিবাচক ধারণা দেওয়ার মূল মাস্টারমাইন্ড সাংবাদিক নামধারী “আইসিটি শ্বেতপত্র টাস্কফোর্স ২০২৫” এর সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে থাকা সদস্য আরফিন শরীয়ত। আরফিন শরিয়ত সাবেক উপদেষ্টা নাহিদের বন্ধু এবং সহপাঠী ছিলেন। শ্বেতপত্র কমিটিতে আসার আগে তিনি দৈনিক বণিক বার্তার আইসিটি ও টেলিকম বিটের প্রতিবেদক ছিলেন। শ্বেতপত্র কমিটিতে থাকার ছাড়পত্র বণিক বার্তা তাকে দেয়নি। পরবর্তীতে বণিক বার্তার চাকরি ছেড়ে একটি নামসর্বস্ব পত্রিকার “প্ল্যানিং এডিটর” পদ দেখিয়ে সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে টাস্কফোর্সে আসেন আরফিন শরীয়ত। নাহিদ উপদেষ্টা থাকাকালীন, ফয়েজ তৈয়বকে প্রথমে আইসিটি বিভাগের পলিসি এডভাইজার (সমন্বয়) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন আইসিটি বিটের সাংবাদিকদের সাথে ফয়েজ তৈয়বের প্রথম মিটিং এর ব্যবস্থা করে দেন এই আরফিন শরীয়ত। মন্ত্রণালয়ের পিআরও এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে, গোপনে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সাথে মিটিং করেন ফয়েজ তৈয়ব। সেই থেকে নাহিদের নির্দেশে আরফিন শরীয়ত গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক সম্পর্কে ফয়েজ তৈয়বকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন এবং সেই পরামর্শ মেনেও নিচ্ছেন ফয়েজ।
সম্প্রতি আমি ফয়েজ তৈয়ব সহ তার অধিনস্ত মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে পোস্ট দিলে, এই তথ্য আমার কাছে কে দিয়েছে, সেটি খুঁজে বের করতে আরফিন শরীয়তকে দায়িত্ব দেন ফয়েজ। তখনই আরফিন শরীয়ত ঐ ৫ সাংবাদিকের বিষয়ে ফয়েজকে জানান। এদের মধ্যে দুজন সাংবাদিককে ফয়েজ তৈয়ব সরাসরি বলেছেন যে, তারা আমাকে এবং জাওয়াদ নির্ঝরকে তথ্য দেন। গত সোমবার নিজ কার্যালয়ের বাইরে এক সাংবাদিকের সাথে হওয়া ঐ ঘটনায় ফয়েজ সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, “আপনি সামি এবং নির্ঝরকে আমার বিষয়ে তথ্য দেন। তারা আমার অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। এজন্য আপনি এবং আপনার মত কয়েকজন দায়ী। আপনি আর আমার দপ্তরে আসবেন না, আমাকে ফোন করবেন না”। এই বলে সে নিরাপত্তা রক্ষীকে বলেন, “একে চিনে রাখো। একে আর ঢুকতে দিবেন না”।