অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির জন্য বরাদ্দকৃত দুটি স্টল বন্ধের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মূলত, বইমেলার নীতিমালায় খাবার ও পানীয় ছাড়া অন্য কোনো পণ্য বিক্রির অনুমতি নেই। তবে, ঘটনা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে ইসলামিস্ট গোষ্ঠী ‘তৌহিদী জনতা’র চাপে স্টল বন্ধ করা হয়েছে—এমন অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি, বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির যৌক্তিকতা নিয়েও বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, যা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
মেলার নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র অনুমোদিত খাবার ও পানীয় বিক্রির অনুমতি রয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের স্টে-সেইফ ব্র্যান্ড স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির স্টল দুটি নীতিমালা লঙ্ঘন করেই স্থাপন করা হয়েছিল। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “ইভেন্ট ম্যানেজার আমাদের অনুমতি ছাড়া স্টলগুলো স্থাপন করেছিল। নীতিমালা অনুযায়ী এমনিতেই স্টলগুলো বন্ধ করা হতো। এখানে কোনো বিশেষ পণ্যের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া-ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম এবং কিছু ব্যক্তি এই ঘটনাকে ‘তৌহিদী জনতা’র চাপের ফল হিসেবে উপস্থাপন করছে। বাস্তবে, নীতিমালার বাইরে যাওয়া যেকোনো স্টল বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে। এটি বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তের অংশ হলেও, ইচ্ছাকৃতভাবে এ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা জনমনে ভুল ধারণা তৈরি করে এবং মেলার মতো একটি সাংস্কৃতিক আয়োজনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
কিছু ব্যক্তি এই ঘটনাতে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির যৌক্তিকতাকে টেনে আনছেন। তাদের দাবি, স্যানিটারি ন্যাপকিন নারীস্বাস্থ্যের একটি অপরিহার্য উপকরণ, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মেলায় বিক্রির অনুমতি দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, অনেকে বলছেন বইমেলা মূলত সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য এখানে বিক্রি করা মেলার উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়ার শামিল।
তবে, এই বিতর্কের মধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে যে, কিছু পক্ষ এই ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে, আলোচনাকে ভিন্ন দিকে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের প্রচেষ্টা মেলার মূল উদ্দেশ্য এবং সামাজিক ঐক্য নষ্ট করতে পারে।
অমর একুশে বইমেলার মতো একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং অপ্রাসঙ্গিক বিতর্ক সৃষ্টি মেলার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। স্টল বন্ধের বিষয়টি মেলার নীতিমালার মধ্যে থাকা নিয়মতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত।
Leave a Reply