ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাস ডাকাতি, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা-রাজশাহী রুটে একটি যাত্রীবাহী বাস প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতদের দখলে ছিল। এই সময়ে নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে (ময়মনসিংহ ব ১১—০০৬১) নম্বরের যাত্রীবাহী বাসে সংঘটিত ডাকাতি ও ধর্ষণের মর্মান্তিক ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঢাকার গাবতলী থেকে রাত ১০টার দিকে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেওয়া বাসটিতে এ ঘটনা ঘটে
নাটোর পুলিশ জানিয়েছে, যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাসটির চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
বাসের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা
২২ বছর বয়সী সোহাগ হাসান, যিনি পেশায় ব্যবসায়ী এবং বড়াইগ্রামের বাসিন্দা, বাসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, বাসটি যাত্রীবোঝাই থাকলেও চালক ও তার সহযোগীরা মাঝপথে আরও সাত-আটজনকে বাসে তোলে এবং পরে তাদের একজন চালকের আসনে বসে যান। এরপর রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাসটি টাঙ্গাইলের বিভিন্ন জনমানবহীন এলাকায় ঘুরতে থাকে। এ সময় ডাকাতরা প্রায় ৫০ জন যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। যাত্রীদের চোখে কাপড় বেঁধে তাদেরকে আতঙ্কের মধ্যে রাখা হয়।
ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা যাত্রীদের কাছে এসে গলায় ছুরি ধরে এবং বাসের আলো বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। সোহাগ হাসান জানান, ডাকাতরা কয়েকজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাতও করে, যার ফলে যাত্রীরা ভয়ে মুখ বন্ধ করে থাকেন।
নারী যাত্রীদের প্রতি বর্বরতা
বাসে থাকা দুই নারী যাত্রীর চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ শুনতে পান সোহাগ হাসান। তিনি বলেন, ডাকাতরা একজন নারী যাত্রীকে জোরপূর্বক পেছনের সিটে নিয়ে যায় এবং তার স্বামী বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। তিনি দাবি করেন, ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
আরেকজন নারী যাত্রী, যার বয়স প্রায় ২৫-৩০ বছর, তাকেও শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয়। যাত্রীদের চোখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয় এবং তাদের মাথা নিচু করে রাখতে বলা হয়।
পুলিশের ভূমিকা
বাস থামানোর পর পরিস্থিতি পরবর্তীতে বাসটি চন্দ্রার একটি ফাঁকা এলাকায় থামিয়ে ডাকাতরা নেমে যায়। বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রামে পৌঁছালে যাত্রীরা সাহসিকতার সঙ্গে বাসটি আটকে দেন। পরে পুলিশ এসে বাস চালক, সুপারভাইজারসহ তিনজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন- বাসচালক বাবলু (৪০), সুপারভাইজার মাহাবুব আলম (৩০) এবং সহকারী সুমন ইসলাম (২৮)।
বাস চালক, সুপারভাইজারসহ তিনজনকে আটক করলেও তারা জামিনে মুক্তি পায়।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও আইনগত ব্যবস্থা বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে ডাকাতির ঘটনা টাঙ্গাইল জেলায় সংঘটিত হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব টাঙ্গাইল পুলিশের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলা না হওয়ার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ আইনশৃঙ্খলা যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় মৌখিক অভিযোগ জানালেও এখনও কোনও মামলা দায়ের হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় আটককৃতরা জামিনে মুক্তি পাওয়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় মৌখিক অভিযোগ করলেও এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি। বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম এবং মির্জাপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেন উভয়েই ধর্ষণের বিষয়ে কোনও তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক হালিম খান জানিয়েছেন, যাত্রীরা বলছেন যে দুইজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সব নারী যাত্রীই শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। তবে ভিকটিমদের না পাওয়ায় সরাসরি ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে ৫৪ ধারায় আটক করলেও মামলা দায়েরের জন্য যাত্রীদের গাজীপুর বা টাঙ্গাইলে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় আটককৃতরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
এই ঘটনায় এখনও কোনও মামলা দায়ের না হওয়ায় এবং ভিকটিমদের পাওয়া না যাওয়ায় প্রকৃত ঘটনা কতটা নৃশংস ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
Read More: স্পেনে বৃহত্তর নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশনে -এর উদ্যোগে ইফতার প্রস্তুতি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
Follow Us On Facebook.com