
রাজধানীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার বংশালে ভবনের রেলিং ধসে নিহত হন বগুড়ার তরুণ রাফিউল ইসলাম (রাফি)। গুরুতর আহত তার মা নুসরাত এখনও অপারেশন থিয়েটারে—ছেলের মৃত্যুর খবর তিনি জানেনই না।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়। নরসিংদীর মাধবদী এলাকার উৎপত্তিস্থল থেকে আসা ৫.৭ মাত্রার সেই কম্পনে পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলিতে একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে পড়ে। ওই রেলিংয়ের নিচে চাপা পড়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন বগুড়ার তরুণ রাফিউল ইসলাম, ডাকনাম রাফি।
সকালে মায়ের সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন রাফি। নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ভবনের রেলিং ভেঙে চাপা পড়ে দুজনই। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন। আঘাতে তার মাথার সামনের অংশ ও মুখমণ্ডল থেঁতলে যায়।
অন্যদিকে মাথায় একাধিক আঘাত পাওয়া রাফির মা নুসরাতকে তাৎক্ষণিকভাবে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এখনো তিনি অতিমাত্রার ট্রমার মধ্যে আছেন, চিকিৎসকরাও তার অবস্থাকে আশঙ্কাজনক বলছেন। পরিবার সূত্র জানায়, তাকে এখনও ছেলের মৃত্যুর কথা বলা হয়নি—শারীরিক অবস্থার কারণে খবরটি জানানোর মতো উপযুক্ত সময় আসেনি।
শনিবার (২২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে রাফির মরদেহ বগুড়ায় পৌঁছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে আহত মা নুসরাতকেও নেওয়া হয় বগুড়ায়। কিন্তু তিনি জানেন না তার ছেলের মরদেহ একই সময়ে সেখানে এসেছে।
রাফিউলের ফুফাতো ভাই পরাগ হোসেন জানান, শনিবার বাদ যোহর বগুড়ার কেন্দ্রীয় সূত্রাপুর ঈদগাহ মাঠে জানাজা হবে। পরে নামাজগড় আঞ্জুমান-ই-মফিদুল কবরস্থানে দাফন করা হবে।
রাফি ২০২১ সালে বগুড়া আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই ভূমিকম্পে একদিকে থেমে গেল তরুণ জীবনের স্বপ্ন, অন্যদিকে তাঁর আহত মায়ের কাছে এখনও অজানা রয়ে গেছে ছেলেকে হারানোর বেদনা।