কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলন্ত সেন্টমার্টিন পরিবহণের বাসে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই বছরের অজামিনযোগ্য কারাদণ্ড দিয়েছে। অভিযুক্তদের সঙ্গে জড়িত তিনজন পলাতক রয়েছে এবং তাদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে সকাল ৯টার দিকে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৫৭১৬৬ নম্বর প্লেটের বাসে ওঠেন। রুট অনুযায়ী বাসটি পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ইউ-টার্ন নেওয়ার কথা থাকলেও, বাসটি প্রথমে চৌদ্দগ্রামের দিকে চলে যায়। পরে সুয়াগাজী থেকে ইউ-টার্ন নিয়ে পুনরায় পদুয়ার বাজার আসে। তখন বাসে ছিলেন চালক, হেল্পারসহ আরও তিনজন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী একা থাকার সুযোগে অভিযুক্তরা তার গলায় ছুরি ধরিয়ে গহনা ও টাকাপয়সা নিয়ে নেয় এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীর হাতেও তারা কামড় দিয়ে আহত করে। পরে শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে ফেলার চেষ্টা করলে তার অনুরোধে ফেলে না দিয়ে শাকিল আবাসিক হোটেলে নিয়ে আসে। এ সময় স্থানীয় একজন পদুয়ার বাজারের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খবর দেন। শিক্ষার্থীরা এসে ভুক্তভোগীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে এবং বাসে থাকা দুইজনকে আটক করে। জড়িত অন্য তিনজন পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। শিক্ষার্থীরা বাস মালিক ও অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে আনার দাবি জানালে পুলিশ তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে দুপুর বারোটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা, যার ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায়, কিন্তু সফল হয় না। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় আসেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মোঃ হোসেন আলী (২৫) এবং মোঃ আলী হোসেন (২৩)। পলাতক তিনজন হলেন পিচ্চি রাসেল (৩২), নূর আলম এবং সৌরভ। সেন্টমার্টিন পরিবহনের মালিক মোঃ চাঁন মিয়া। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সেন্টমার্টিন পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া খানম জানান, শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, গ্রেফতার হওয়া দুইজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে, এবং বাকী তিনজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীও হিমশিম খাচ্ছে। অবশেষে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযুক্তদের দুইবছর কারাদণ্ড দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, একজন নারী শিক্ষার্থীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাস থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, দুইজন ধরা পড়েছে এবং পুলিশ বাকী তিনজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তদের ২ বছরের অজামিনযোগ্য কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং পুলিশ এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দেবে।