কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) চাঁদপুর জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের আঞ্চলিক সংগঠন চাঁদপুর স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর নবীনবরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদা বেগম, আইসিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান, চাঁদপুর ইউনাইটের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ আল-আসাদ বাবর, এবং চাঁদপুর থেকে আগত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সূচনায় পবিত্র কোরআন ও গীতা থেকে পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অতিথি ও নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সঞ্চালনায় ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা রহমান সুখী ও ফার্মেসি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিয়ান আহমেদ।
বাংলা বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসীন আরফাত অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন,
“ধন্যবাদ জানাই আজ যারা আমাদের এই সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছেন — যারা আমাদের চাঁদপুরের সকল শিক্ষার্থীকে একত্রিত ও পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ক্যারিয়ার ও ডিগ্রি অর্জনের স্থান নয়, এটি নিজেকে গড়ে তোলার এবং স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এক উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এখানে আমাদের জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা বিস্তৃত হয় চিন্তায়, মানবিকতায় ও আত্মোন্নয়নের পথে।”
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদা বেগম বলেন,
“এখানে যখন নবীনরা পরিচয় দিচ্ছিল — যে আমি চাঁদপুরের ওই জায়গা থেকে এসেছি — তখন আমার খুব হতাশ লাগেছিল। কারণ আমি এমন একটি জায়গা থেকে এসেছি, যার মাও নেই, বাবাও নেই। নদীর জলে ভেসে ভেসে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। চাঁদপুরে তো এমনিতেই দৈন্যদশার শেষ নেই, দুর্দশারও শেষ নেই; আমরা নদীভাঙা এলাকার মানুষ। আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে।
এবার আসি, এই ঘাটতিগুলো থেকে আমরা কোথায় যেতে চাই। আমরা নদীর জলে ভেসে ভেসে এই পর্যায়ে এসে পড়েছি, এখন সেই ভেসে চলা থেকে আমরা আসলে কোথায় যেতে চাই? বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক জায়গা, যেখানে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষকে একটু একটু করে গড়ে তোলে। এই গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের একটি বড় ভূমিকা থাকে, পাশাপাশি থাকে সংগঠনগুলোরও অবদান।”
আইসিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান বলেন,
“নতুন হোক বা পুরোনো, সব শিক্ষার্থীর জন্যই অ্যাসোসিয়েশন গুরুত্বপূর্ণ। আমার ছাত্রজীবনে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি ছিল। নতুন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এক ধরনের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই বিচ্ছেদের পর তারা যেন একপ্রকার এতিম হয়ে পড়ে। তাদের একটি পরিবারের প্রয়োজন হয়, আর সেই পরিবারের ভূমিকা পালন করে অ্যাসোসিয়েশন। শিক্ষার্থীদের নানা প্রয়োজনে ও সমস্যা মেটাতে অ্যাসোসিয়েশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য সিনিয়রদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের অন্যতম মাধ্যমও হলো অ্যাসোসিয়েশন।”
সংগঠনের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ বলেন,
“শুরুতেই সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, এত ব্যস্ততার মধ্যে উপস্থিত থেকে আমাদের অনুষ্ঠানকে সফল করে তোলার জন্য। এই সংগঠন ২০১২ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে আসছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকি। আজ আমাদের শিক্ষক ও অতিথিবৃন্দ যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন, আমরা তা মেনে চলার চেষ্টা করব। আজকের এই অনুষ্ঠানের মূল প্রেরণা যাঁদের জন্য সেই নবীন ও প্রবীণদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”