
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো অর্থ ব্যয় করা হবে না। বরং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের বিভিন্ন তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা হচ্ছে।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ছাড়াও বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তহবিল ব্যবহার করে সিসিটিভি স্থাপন করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়ার সমন্বয় করছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসিটিভি রয়েছে। এসব ক্যামেরা নির্বাচনকাজে ব্যবহারের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। ফলে নতুন করে ব্যয় ছাড়াই বড় একটি অংশে নজরদারি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে ইসি।
ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই সিসিটিভি বসানো আছে, যদিও কিছু ক্যামেরা সচল নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এসব মিলিয়েও সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হওয়ায় অতিরিক্ত সিসিটিভি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, পর্যালোচনায় দেখা গেছে একটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপনে সর্বোচ্চ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। এই অর্থ স্থানীয় প্রশাসনিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
ইসির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সব কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপনের সুপারিশ করলেও অর্থের অভাবে শুরুতে তা নাকচ করেছিল কমিশন। এমনকি গত আগস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল, এ বিষয়ে ইসির করণীয় কিছু নেই।
পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে চোরাগুপ্তা হামলাসহ বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয় উঠে এলে কমিশন নীতিগতভাবে সিসিটিভি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সিসিটিভি সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের আগেই কেন্দ্রগুলো ভোটার চলাচলের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হবে। যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেখানে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সরাসরি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৪৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসিটিভি রয়েছে, যেগুলো আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১টি এবং ভোটকক্ষ প্রায় আড়াই লাখ।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।