শুল্ক আর আধিপত্যের বিরুদ্ধে ব্রিকস একাট্টা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ: প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস হাসিনার ফাঁসির রায়ে শেকৃবিতে মিষ্টিমুখ ও আনন্দ মিছিল নষ্ট মোবাইল দান কর্মসূচিতে বেকার যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ সৌদি আরব বলেছে, “স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র” ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রশিবিরের মিছিল হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে প্রতিক্রিয়া: ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে দাবি হেফাজতে ইসলামের কুবিতে আইইএলটিএস প্রস্তুতি বিষয়ক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত কুবিতে প্রোগ্রামিং ও সমস্যা সমাধান কর্মশালা অনুষ্ঠিত বুটেক্স হলগুলোতে মশার ভয়াবহ উপদ্রব, ডেঙ্গুতে বহু শিক্ষার্থী আক্রান্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Allama Iqbal’s Theory of Khudi’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

শুল্ক আর আধিপত্যের বিরুদ্ধে ব্রিকস একাট্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫
  • ১৭১ বার দেখা হয়েছে

বিশ্বব্যাপী আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে এক কণ্ঠে কথা বলল উদীয়মান অর্থনীতির জোট ব্রিকস। রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে অংশ নেয় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ও ৪০ শতাংশ অর্থনৈতিক আউটপুটের প্রতিনিধিত্বকারী এই জোট এবারের সম্মেলনে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে।

সম্মেলনের শুরুতেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আজকের বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতা আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থায় প্রতিফলিত হচ্ছে না। তার মতে, বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার ভাঙন আজ স্পষ্ট। তিনি ন্যাটো সামরিক জোটকেও দুষেছেন বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেওয়ার জন্য।

এই সম্মেলনের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা শুল্কনীতি। সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলে, বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হবে। এখানেই শেষ নয়, ব্রিকসের ‘আমেরিকাবিরোধী অবস্থানের’ পক্ষে থাকলে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন তিনি। এই ঘোষণা ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করে লিখেছেন, “এই নীতিতে কোনো ছাড় থাকবে না।”

ব্রিকসের যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। তারা বলেছে, এই একতরফা শুল্ক ও অশুল্ক বাধা বিশ্ববাণিজ্যের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং বিশ্ব অর্থনীতির অগ্রগতিতে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি বলা হয়নি, কিন্তু বার্তাটি যে কার উদ্দেশে তা স্পষ্ট।

এই সম্মেলনে ইরানকেও প্রতীকী সমর্থন জানিয়েছে ব্রিকস। সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় একের পর এক হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে ব্রিকসের পক্ষ থেকে এই ধরনের হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। যদিও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ব্রিকস অবস্থান নিলেও ইরান ঐ ঘোষণায় কিছু আপত্তি জানিয়েছে। তবে তারা পুরোপুরি তা প্রত্যাখ্যান করেনি।

বিশ্বের নতুন নেতৃত্ব কাঠামো নিয়েও এই সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবারের সম্মেলনে অংশ নেননি। ১২ বছরের প্রেসিডেন্সির মধ্যে এবারই প্রথম। তার বদলে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংকে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও উপস্থিত ছিলেন না। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তিনি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

পুতিন তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব এখন উদীয়মান অর্থনীতির দিকে সরে যাচ্ছে। লিবারেল বিশ্বায়নের যুগ শেষের পথে। তিনি ব্রিকসের দেশগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বর্তমান বহুমেরু বিশ্বে গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব দিতে হবে ব্রিকসকে। তিনি এপ্রিল মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার কথা তুলে ধরে এর তীব্র নিন্দা করেন। সেই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ব্রিকসের যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, সন্ত্রাসবাদের কোনো রূপকে বরদাস্ত করা হবে না। সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ, অর্থায়ন এবং নিরাপদ আশ্রয়ের বিরুদ্ধেও একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে ব্রিকস।

এছাড়া সম্মেলনে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি। ব্রিকস নেতারা একমত হন, এই প্রযুক্তি যেন শুধু ধনী দেশের দখলে না থাকে। প্রয়োজন আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি। বর্তমানে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই খাতে নেতৃত্ব দিলেও চীন ও অন্যান্য ব্রিকস দেশ দ্রুত সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

দুই দশক আগে মাত্র ৫টি দেশ নিয়ে গঠিত ব্রিকস আজ ১১ সদস্যবিশিষ্ট বিশাল শক্তি। তবে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যও বেড়েছে। ইরান-সৌদি আরব, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোর অবস্থান ভিন্ন হলেও, মার্কিন আধিপত্যবাদ এবং একতরফা শুল্কনীতির বিরুদ্ধে জোটের এই ঐক্য বিশ্ব রাজনীতিতে বড় বার্তা দিয়ে গেল।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT