বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু পালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি একক কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের দাবি ছিল, বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ও ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) কোর্সের পরিবর্তে একটি সমন্বিত ডিগ্রি চালু করা। গত রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগের মতো বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ও ডিভিএম কোর্স চালু থাকবে এবং পাশাপাশি কম্বাইন্ড ডিগ্রিও চালু থাকবে। শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেন এবং বিকেলে উপাচার্যসহ প্রায় আড়াইশ শিক্ষককে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
আন্দোলনের একপর্যায়ে, শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ প্রায় আড়াইশ শিক্ষককে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এই সময়ের মধ্যে, উপাচার্যের বাসভবনের দিক থেকে অর্ধশতাধিক বহিরাগত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক অন্তত ১০ জন আহত হয়।
হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হবে। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোফিদুল আলম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও ডিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থীরা হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানাচ্ছিলাম, কিন্তু বহিরাগতরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছে।” তারা আরও বলেন, “আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
বাকৃবির এই সহিংস ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শুনে একটি সমাধানে পৌঁছানো, যাতে ভবিষ্যতে এমন সহিংস ঘটনা এড়ানো যায়।