
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের পর রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা কেঁপে ওঠে। অফিস–স্কুল–বাণিজ্যিক ভবন দুলতে শুরু করলে মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় বের হয়ে আসে। কয়েক সেকেন্ডের এই তীব্র কম্পনে ঢাকায় তিনজন ও নারায়ণগঞ্জে একজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকা, ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।

পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকায় পাঁচতলা ভবনের রেলিং হেলে পড়লে নিচ দিয়ে হাঁটা তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম, সবুজ নামে ত্রিশ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এবং আট বছর বয়সের এক শিশু। তাদের লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় রাস্তার পাশের একটি দেয়াল হেলে পড়ে নবজাতক ফাতেমার মৃত্যু হয়। শিশুটির মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগম গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
উৎপত্তিস্থলের কাছে হওয়ায় নরসিংদী জেলায় আহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শহরের গাবতলী এলাকায় ছয়তলা নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ভেঙে নিচের একতলা বাড়ির ওপর পড়ে দেলোয়ার, তার ছেলে ওমর ও মেয়ে তাসফিয়া আহত হন। নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার পর বাবা–ছেলেকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলাতেই ছোট-বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. গুলশানা কবির জানান, ভূমিকম্পের পর প্রায় অর্ধশতাধিক নারী–পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনও রোগীরা এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ১০ জন, গাজীপুর তাজউদ্দীন মেডিকেলে ১০ জন, নরসিংদীতে ৫৫ জনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আহতদের সংখ্যা শতাধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের অভিঘাতেই নরসিংদীর পলাশে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জাতীয় গ্রিড সাবস্টেশনে আগুন ধরে যায়। তীব্র কম্পনে সাবস্টেশনের যন্ত্রাংশে ক্ষতি হওয়ায় তা মুহূর্তে আগুনের সূত্রপাত ঘটায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়। খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট দ্রুত সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামতের কাজ চলছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দেশের বেশিরভাগ স্থানে কম্পন অনুভূত হওয়ার পর মানুষ ভবন থেকে বের হয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানের ভিডিও—যেখানে ভবনের দুলুনি, মানুষজনের ভীতসন্ত্রস্ত দৌড়ঝাঁপ এবং অপেক্ষমাণ ভিড় দেখা যায়। বড় ধরনের আরও কোনো বিপর্যয় না ঘটলেও এই ভূমিকম্প মাঝারি মাত্রার হলেও দেশের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির প্রশ্ন নতুন করে সামনে এনেছে। তবে দ্রুত সাড়া দিয়ে ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ মানুষ যেভাবে একযোগে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, সেটিই দুর্যোগ মোকাবিলায় আবারও “সাবাস বাংলাদেশ”-এর উদাহরণ হয়ে রইলো।