
বাইতুল্লাহ’র তৃতীয় এক্সটেনশনে আমার পাশেই ইতিকাফে বসেছেন একজন তরুন আলেম। ইফতারির ঠিক পরপর কাঁদো কাঁদো অবস্থায় এসে একটু রুকইয়া করে দিতে বলে কাঁদতে থাকলেন। সমগ্র শরীর ঘামাচ্ছে তার। রুকইয়া করে দিচ্ছি আর মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করছি, কি সমস্যা তার!
বললো, সমগ্র শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে,
আর বুক, মাথা, পেট ইত্যাদি দেখিয়ে বলছে যেনো
যেসব স্থানে রুকইয়া করে দেই।
কিভাবে কি হলো তা জানতে গিয়ে যা শুনলাম
তা আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
.
আল্লামা বাবুনগরীর (রহ.) সাথে মামলায়
২০২১ সালে এই তরুন আলেমকে ধরে নিয়ে যায়
বাহিনীর লোকজন।
বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাপ দেয়।
তাকে একমাস রিমান্ডে রাখে।
একাধারে ৬দিন পেছন থেকে হাত বেধে
দাঁড় করিয়ে রাখে।
বসতেও দেয় নি।
ফলে শরীর ফাটা শুরু করে।
পাশাপশি লজ্জাস্থানসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে
বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন করতে থাকে।
হুমকি দেয়, জীবন শেষ করে দিবে
যদি এজেন্সির কথামত স্বীকারোক্তি না দেয়।
তিনি স্বীকারোক্তি দেননি।
আঘাতের ফলে আহত স্থানগুলো থেকে
পুঁজ ঝরতে শুরু করে।
.
আমি তার হাত, পা, পায়ের গোড়ালি,
হাত-পায়ের আঙুল,
গলায় নিচ, বুকের সামনের অংশের দিকে তাকালাম,
দেখলাম, এখনো সব প্রায় ফেটে ফেটে আছে,
হাত পায়ের নখগুলো কিছুটা সাদা,
আর চারিপাশের চামড়াগুলো ভয়াবহ কালো, ফাটা।
পায়ের গোড়ালিসহ টাকনুর নিচে তাকানো যাচ্ছেনা,
বিভৎস, ভয়ংকর, ভীতিকর।
ভয় পেতে হয়।
ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
এগুলো এমন হলো কিভাবে?
বললো, নির্যাতনের প্রভাবে,
আর এর প্রভাবেই সারা শরীরে ক্যান্সার এখন থার্ড স্টেজ।
.
আমি একটু অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম,
আমার বেদনাহত চেহারা তার থেকে একটু লুকাতে।
আমি চোখ বন্ধ করলেই
এই তরুন আলেমের বেদনাক্লিষ্ট চেহারা
আমাকে অস্থির করে তোলে।
আমি জানি,
তার নিপীড়িত শরীর আর বেথাতুর চেহারা
দীর্ঘদিন আমাকে স্বপ্নেও তাড়া করে বেড়াবে।
.
এই ভয়াবহ অতীত দেশের মানুষের জীবনে
আর ফিরে না আসুক…
বাইতুল্লায় হাজারো বাংলাদেশীর সাথে
কদরের দশকে আমিও নিরন্তর সেই দুয়া করছি।
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd