সোনা তৈরি করা— মানুষের চিরন্তন এক মোহ। ফেরাউনদের আমল থেকে মধ্যযুগীয় ইউরোপ পর্যন্ত, কত বিজ্ঞানী, সাধক আর পাগল নাকি রাত জেগে চেষ্টা করেছেন ধাতু থেকে সোনা বানাতে। কারও নাম শোনা গেছে, কারও যায়নি। কেউ ছিলেন রহস্যে ঘেরা— যেমন জাবির ইবনে হাইয়ান, নিকোলাস ফ্লামেল, যারা নাকি পরশ পাথরের মাধ্যমে সোনা বানাতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনকে নিয়েও কিংবদন্তী রয়েছে।
তবে মানুষ এই সোনা বানাতে আদৌ সক্ষম হয়েছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এবার খোঁজ পাওয়া গেছে সোনা বানাতে সক্ষম এক আজিব ব্যাকটেরিয়ার, যা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
বাস্তবতা যে কল্পনাকেও হার মানায়, আবারও তার প্রমাণ মিলল সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের হাতে।
জার্মানি আর অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক খুঁজে পেয়েছেন এমন এক আজব ব্যাকটেরিয়া, যার পেট মানে একেবারে অলীক কারখানা। নাম Cupriavidus metallidurans — মুখে উচ্চারণ কঠিন, কিন্তু কাজের বেলায় একেবারে সোজাসাপটা। ধরা যাক, আপনি এক চিমটি বিষাক্ত ধাতু দিলেন ওকে, ব্যাকটেরিয়াটি গিলে ফেলল সেই ধাতু। তারপর একটু সময় নিল, একটু হজম করল— এবং হায় হায়! পেট সাফ করে দিল যে জিনিস, তা খাঁটি সোনা! একেবারে ২৪ ক্যারেট!
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইড বিশ্ববিদ্যালয় আর জার্মানির মার্টিন লুথার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ ঘটনাকে প্রথমে নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারেননি। খনির বিষাক্ত পরিবেশে, যেখানে অন্য কোনো জীব টিকতেই পারে না, সেখানে দিব্যি জীবনযাপন করছে এই ব্যাকটেরিয়া। আর শুধু বেঁচে থাকছে তা-ই নয়, উপহার দিচ্ছে সোনার খনি— নিজেই! তারা বিষাক্ত ধাতু খেয়ে মলত্যাগ করছে ২৪ ক্যারেটের সোনা। সোনার ডিম পাড়া হাঁস কল্পনাতে থাকলেও সোনার মলত্যাগ করা ব্যাক্টেরিয়া এক দারুণ বাস্তব!
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা দিয়ে এখনই বিশাল আকারে সোনা তৈরি করা যাবে না।
কিন্তু তাতে কী? আজকের অদ্ভুত কাণ্ডই তো কালকের প্রযুক্তি হয়ে ওঠে। একদিন হয়তো খনি আর বিস্ফোরণের যুগ শেষ হবে, আর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে চলবে ধাতু আহরণ। কে জানে, তখনকার স্কুলবইয়ে লেখা থাকবে: “সোনা বলতে বোঝায় Cupriavidus metallidurans-এর মল।”
বস্তুত, এই ব্যাকটেরিয়া যেন আধুনিক যুগের এক মাটির ফ্লামেল— কেমিস্ট নয়, অ্যালকেমিস্ট নয়, সে এক ব্যাকটেমিস্ট!