বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা ও শাস্তির ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আছিয়া নামের মাগুরার এক শিশুর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায়। নৃশংস নির্যাতনের শিকার হলেও আইনগত লুপহোলের কারণে অভিযুক্ত ধর্ষক সর্বোচ্চ শাস্তি এড়ানোর পথ খুঁজছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনের বিবরণ
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অভিযুক্ত ধর্ষক প্রথমদিকে আছিয়ার যৌনাঙ্গের ৫ সেন্টিমিটার গভীরে ছিদ্র করে এবং স্তনে একাধিক ক্ষত সৃষ্টি করে। তবে স্থানীয়রা ছুটে আসায় সে আরও কিছু করার সুযোগ না পেয়ে আছিয়াকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
ডাক্তারি প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণ নেই?
ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, আছিয়ার যৌনাঙ্গে কোনো বীর্য পাওয়া যায়নি এবং সেখানে শারীরিকভাবে ছেঁড়া বা ফাটা কোনো চিহ্ন ছিল না। এর অর্থ, ধর্ষক তার পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানোর সুযোগ পায়নি। কিন্তু বিষয়টি এখানেই বিতর্কিত হয়ে উঠেছে, কারণ বিদ্যমান আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে—পুরুষাঙ্গ প্রবেশ না ঘটলে সেটি ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না।
আইনের দুর্বলতা ও ফাঁকফোকর
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যৌনাঙ্গে স্পর্শ করা বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে ছিদ্র করাও ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং সেটি যৌন নিপীড়নের আওতায় পড়ে। অথচ ধর্ষণের শাস্তি যেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড, সেখানে যৌন নিপীড়নের শাস্তি মাত্র তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড। এ কারণেই অনেক অপরাধী আইনের এই ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়।
দুর্বল আইন ও প্রভাবশালীদের প্রভাব
সোর্সের তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত হিটুর পরিবার ইতোমধ্যে আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। তাদের উদ্দেশ্য—এই মামলাকে যৌন নিপীড়নের মামলা হিসেবে দাঁড় করানো এবং শাস্তি কমানোর পথ বের করা। আইনজীবীরা যদি এ কৌশল প্রয়োগ করেন, তবে সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে অভিযুক্ত হয়তো ১০ বছরের কারাদণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে জামিন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার জনসাধারণ
জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে এই আশঙ্কায় যে, যদি ধর্ষক সর্বোচ্চ শাস্তি না পায়, তবে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ আরও বাড়বে। তাই আছিয়ার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে মানুষ সোচ্চার হয়েছে। আইন সংশোধন ও কঠোরতম শাস্তির দাবি উঠেছে সর্বমহলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ না করলে অপরাধীরা বারবার রেহাই পাবে। তাই এখনই সময়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইন সংশোধন করে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শাস্তিকে আরও কঠোর করার।