২০২১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন-সমর্থিত সরকারের পতনের পর এটি কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম নয়াদিল্লি সফর। গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মুত্তাকির সাতদিনব্যাপী সফর শুরু হয়। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুত্তাকি জানান, তিনি দেওবন্দ সফরে যাবেন—এটি তার সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দেওবন্দে পৌঁছালে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তার ওপর ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করে অভ্যর্থনা জানান। পরে তিনি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে ঐতিহ্যবাহী ‘দারসুল হাদিস’ পাঠে অংশ নেন, যা পরিচালনা করেন মাওলানা নোমানি।
১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র। এটি সুন্নি ইসলামি চিন্তাধারার ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত। ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার মুসলিম শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করেন।
দেওবন্দ প্রশাসন দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে শনিবারের সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, মাদ্রাসাটি এর আগে কখনও কোনো ‘ভিআইপি’ সফরের জন্য পাঠদান বন্ধ করেনি।
দেওবন্দে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উপস্থিতিতে অভিভূত হয়ে মুত্তাকি স্থানীয় উলামা ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “কেবল দারুল উলুমের মানুষই নয়, আশপাশের এলাকার মানুষও আমাকে যেভাবে স্বাগত জানিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। এই ভালোবাসার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল বলে আমি বিশ্বাস করি।”
এই সফরকে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, তালেবান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের এমন ধর্মীয় ও সামাজিক পরিমণ্ডলে উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে।