
জুলাই গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আজ সোমবার সকাল ১১টায় রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এটি প্রথম সম্ভাব্য রায়।
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে দেশব্যাপী গণআন্দোলনের সময় সংগঠিত হত্যাকাণ্ড, অমানবিক আচরণ, উসকানি ও নির্দেশনার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে আজ সোমবার। সকাল ১১টায় বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এ রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল এ দিন নির্ধারণ করেন। রায় ঘোষণা অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। একইসঙ্গে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পর্দায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রায়কে ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ এবং আশপাশে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মামলার প্রতি দেশ–বিদেশে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
মামলার তিন আসামি—
1️⃣ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (পলাতক, বর্তমানে ভারতে অবস্থান)
2️⃣ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (পলাতক, ভারতে অবস্থান)
3️⃣ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন (আদালতে জবানবন্দিদাতা ও অ্যাপ্রুভার আবেদনকারী)
আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে—
উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান (১৪ জুলাই গণভবন সংবাদ সম্মেলন)
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে নির্মূলের নির্দেশ
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার অভিযোগ
রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ
আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর অভিযোগ
এ অভিযোগগুলোতে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উসকানি, সহায়তা, তৎপরতা এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় আরোপ করা হয়।
১ জুন ২০২৪: আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল
৫ আগস্ট ২০২৪: সরকার পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন
১৭ অক্টোবর ২০২৪: প্রথম বিচারিক কার্যক্রম
১২ মে ২০২৫: তদন্ত প্রতিবেদন জমা
৩ আগস্ট – ৮ অক্টোবর ২০২৫: সাক্ষ্যগ্রহণ
২৩ অক্টোবর ২০২৫: যুক্তিতর্ক সমাপ্ত
১৩ নভেম্বর ২০২৫: রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ
সাক্ষ্যের তালিকায় ৮৪ জনের মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রমাণপত্র, ভিডিও ক্লিপ, নথি, জব্দ তালিকা এবং তদন্ত প্রতিবেদন বিচারকার্য পরিচালনায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রসিকিউশন পক্ষ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ দণ্ড দাবি করে, তবে অ্যাপ্রুভার আবেদনকারী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিষয়ে রায় ট্রাইব্যুনালের বিবেচনায় ছেড়ে দেয়।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দুই আসামির খালাস দাবি করেন।
রায় ঘোষণার মাধ্যমে জুলাই গণআন্দোলন সংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।