নিউইয়র্কের তরুণ মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি: এক বছরে অচেনা মুখ থেকে বৈশ্বিক প্রভাবের কেন্দ্রে - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কুবির সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর কওমি ডিগ্রিধারীদের জন্য কাজী হওয়ার দরজা খুলল; আরও সরকারি খাত উন্মুক্তের দাবি সীমান্তে তীব্র গুলি বিনিময়, পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনা চরমে জাককানইবিতে সমুদ্র ও জলবায়ু–বিষয়ক ‘Exploring the Blue Earth’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দুধকুমার নদে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপ, স্বস্তিতে তীরবর্তী বাসিন্দারা ইবিতে জুলাই বিপ্লববিরোধী অভিযোগে ফের ৯ শিক্ষক বরখাস্ত নানিয়ারচর জোন (১৭ই বেংগল) এর মানবিক উদ্যো‌গে বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম নির্বাহী পরিচালক হলেন মো. সাদি উর রহিম জাদিদ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ইবিতে আলোচনা সভা জামায়াতের মনোনয়নে কে এই হিন্দু প্রার্থী

নিউইয়র্কের তরুণ মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি: এক বছরে অচেনা মুখ থেকে বৈশ্বিক প্রভাবের কেন্দ্রে

আন্তর্জাাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২৮ বার দেখা হয়েছে

৩৪ বছর বয়সে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র জোহরান মামদানি এখন আমেরিকার রাজনীতির নতুন প্রতীক। তৃণমূল রাজনীতি, তরুণ ভোটার ও প্রগতিশীল চিন্তার মিশেলে তিনি গড়ে তুলেছেন নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

মাত্র এক বছর আগেও জোহরান মামদানি ছিলেন রাজনীতির তুলনামূলক অচেনা নাম। এখন তিনি নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র—যার প্রভাব শহরের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়, এমনকি আন্তর্জাতিক পরিসরেও। ৩৪ বছর বয়সে এমন এক নেতৃত্বের উত্থান বিরল, যা একদিকে প্রতীকী, অন্যদিকে বাস্তব পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী।

ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে মামদানির উত্থান ছিল দ্রুত ও আকস্মিক। নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি পুরনো রাজনীতির ধারা ভেঙে তৈরি করেছেন এক “তৃণমূলতান্ত্রিক আন্দোলন”। ব্যয়বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া ও সামাজিক বৈষম্যে ক্লান্ত মধ্যবিত্ত ও তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠে তিনি হয়ে উঠেছেন আশার প্রতীক।

তার জনপ্রিয় স্লোগান — “জীবন এত কঠিন হতে হবে না” — নিউইয়র্কের রাস্তাঘাট থেকে টিকটক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কোনো জাঁকজমকপূর্ণ রাজনৈতিক ভাষণ নয়, বরং সহজ, মানবিক ও হাস্যরসাত্মক বার্তাই তাকে জনমানুষের কাছে টেনে আনে। কখনও সাবওয়ে ট্রেনে যাত্রার সময় আকস্মিক বিয়ের সাক্ষী হওয়া, কখনও ম্যারাথনে দৌড়াতে দৌড়াতে ভাড়া বৃদ্ধির সমালোচনা—এসব মুহূর্তে তিনি রাজনীতিকে নিয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তবতায়।

অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি তার সহমর্মিতা ও বহুভাষিক প্রচারণাও ছিল অনন্য। তিনি উর্দু, হিন্দি, স্প্যানিশ ও ইংরেজিতে প্রচারণা চালিয়ে পৌঁছে গেছেন শহরের বিভিন্ন অভিবাসী মহলে—মসজিদ থেকে নাইট শিফটের কারখানায়, স্থানীয় স্কুল থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা পর্যন্ত। এমনকি গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করে এবং মুসলিম পরিচয়ের গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি সাহসী নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

তবে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেক নিচু পর্যায় থেকে। উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন। তার মা মীরা নায়ার একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা (‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘কুইন অব কাটওয়ে’), আর বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ছোটবেলা থেকেই বহুসাংস্কৃতিক বাস্তবতায় বেড়ে ওঠা মামদানি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্সে পড়ার সময় প্রথম ক্রিকেট দল গঠন করেন। পরে বোডউইন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং সেখানে “স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন” অধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজনীতিতে আসার আগে তিনি কাজ করেছেন কমিউনিটি অর্গানাইজার ও বন্ধক জব্দ প্রতিরোধ পরামর্শক হিসেবে। ২০২০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ৩৬তম জেলা থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও উগান্ডান বংশোদ্ভূত মুসলিম হিসেবে ইতিহাস গড়েন। সেটিই ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।

ব্যক্তিগত জীবনেও মামদানি আলোচনায় আসেন। ২০২১ সালে সিরীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী রামা দুয়াজির সঙ্গে পরিচয় ঘটে এবং চলতি বছরের শুরুতে নিউইয়র্ক সিটি হলে তাদের বিয়ে হয়।

২০২৫ সালের ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রাইমারিতে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ের পর মামদানি ধীরে ধীরে দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সমর্থন পেতে শুরু করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস, গভর্নর ক্যাথি হোচুল ও কংগ্রেসনাল নেতা হাকিম জেফরিস তার প্রচারণায় প্রকাশ্যে সমর্থন দেন। ছোট ছোট তৃণমূল অনুদান ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় তার প্রচারণা নতুন প্রাণ পায়।

মামদানির রাজনৈতিক কৌশল ছিল ডিজিটাল যুগের সঙ্গে মানানসই। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে তার নীতিগত ভিডিওগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মজার ছলে, কিন্তু স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে তিনি তরুণ ভোটারদের রাজনীতিতে টেনে আনেন—যা ট্র্যাডিশনাল প্রচারণার বাইরে গিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

তার প্রতিশ্রুতি ছিল স্পষ্ট ও জনভিত্তিক: ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, সাশ্রয়ী শিশু যত্ন, সহজলভ্য মুদি বাজার, গণপরিবহন উন্নয়ন এবং ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি। পাশাপাশি তিনি করপোরেট ট্যাক্স বাড়িয়ে সিটি-মালিকানাধীন মুদি দোকান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন—যা ‘জনসেবাধর্মী অর্থনীতি’র নতুন ধারণা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রিপাবলিকানদের তীব্র সমালোচনা ও ইসলামোফোবিক প্রচারণার মুখেও তিনি নির্ভীক ছিলেন। কিছু ডানপন্থী নেতা তাকে “সমাজতান্ত্রিক হুমকি” বলে আখ্যা দেন, এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাকে “অ্যান্টি-আমেরিকান” বলে সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন বা ফেডারেল তহবিল স্থগিতের হুমকিও উচ্চারিত হয়। এসব বিতর্ক মামদানিকে কেবল একজন মেয়র নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির প্রভাবশালী কণ্ঠে পরিণত করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানির উত্থান ৯/১১-পরবর্তী প্রজন্মের এক ভিন্ন রাজনৈতিক জাগরণের প্রতীক। যখন আমেরিকায় শ্বেত জাতীয়তাবাদ ও কর্তৃত্ববাদ আবার মাথা তুলছে, তখন এক তরুণ মুসলিম, অভিবাসী ও প্রগতিশীল নেতা হিসেবে মামদানি সেই ধারা ভেঙে নতুন আশা জাগাচ্ছেন।

নিউইয়র্কের মেয়র কার্যালয়ে বসার আগে থেকেই তিনি বলেছিলেন, “আমাদের লড়াই রাজনীতির নয়—এটি শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদার লড়াই।” এখন শহর তাকিয়ে আছে তার দিকেই—যে নেতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এক ন্যায্য, সাশ্রয়ী ও মানবিক নিউইয়র্ক গড়ার।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT