আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক সীমান্ত লঙ্ঘন ও আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলার জবাবে দেশটির সেনাবাহিনী পাল্টা অভিযান চালিয়েছে। রোববার (১২ অক্টোবর) কাবুল থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তান যদি আবারও আফগান সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে, তাহলে আফগান বাহিনী “দৃঢ় ও কার্যকর জবাব” দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
আফগান মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডুরান্ড লাইন সংলগ্ন পাকিস্তানি মিলিশিয়া ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে আফগান বাহিনী উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। এসব অভিযানে কয়েকটি পাকিস্তানি সেনা পোস্ট ধ্বংস হয়েছে, বহু সেনা হতাহত হয়েছে এবং আফগান বাহিনী কিছু যুদ্ধলব্ধ অস্ত্র ও সরঞ্জাম দখল করেছে। অভিযান পরিচালিত হয়েছে হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, খোস্ত, পাকতিয়া, কুনার ও নাঙ্গারহার প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কাবুল ও পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রতিক্রিয়াতেই এই পাল্টা হামলা চালানো হয়। তাদের দাবি, পাকিস্তান একাধিকবার আফগান ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণ করেছে, যা সরাসরি দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। আফগান কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব হামলায় বেসামরিক নাগরিকও হতাহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রইটার্স জানায়, সীমান্ত এলাকায় তীব্র গুলি বিনিময়ের পর পাকিস্তান তার প্রধান সীমান্ত ফাঁড়িগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। অপরদিকে, আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডুরান্ড লাইন বরাবর তীব্র গোলাগুলির কারণে সীমান্ত বাণিজ্য ও যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, আফগান বাহিনী দাবি করেছে, রাতভর অভিযানে তারা অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, তালেবান সরকারের বাহিনী প্রথমে সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানি পোস্টে গুলি চালায়, ফলে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তান সরকার আফগান কর্তৃপক্ষকে ‘উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
চলমান এই সংঘর্ষে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও টানাপোড়েনে পড়েছে। সৌদি আরব ও কাতার উভয় পক্ষকে সংযম ও আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করছে, সীমান্ত উত্তেজনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।