বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করছেন। তিনি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গ্লোবাল মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিতে আগামীকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) ইতালি যাচ্ছেন। এই মিশনের উদ্দেশ্য হলো গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে সেখানে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা।
দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শহিদুল আলম শনিবার ঢাকা শহরের পান্থপথে অবস্থিত দৃকপাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তার এই যাত্রার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “গাজায় গণহত্যা চলছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একযোগে সেখানে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, অথচ বিশ্ব নীরব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমি এই মিশনে অংশ নিতে যাচ্ছি। যদি আমরা এই সংগ্রামে পরাজিত হই, তবে মানবতা পরাজিত হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নৃবিজ্ঞানী, লেখক ও দৃকের পরিচালক রেহনুমা আহমেদ, দৃকের জেনারেল ম্যানেজার ও কিউরেটর এএসএম রেজাউর রহমান, দৃকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. কামাল হোসেন এবং সাংবাদিক, গবেষক ও দৃকের পরিচালক সায়দিয়া গুলরুখ।
গ্লোবাল সুমুদ মিডিয়া ফ্লোটিলা, যা ‘সুমুদ’ (আরবি: স্থিতিস্থাপকতা) নামে পরিচিত, একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আন্দোলন। এটি গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পাশাপাশি গাজার জনগণের কণ্ঠস্বর বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে গঠিত। ফ্লোটিলার সদস্যরা ৪৬টি দেশের নাগরিক, যার মধ্যে বাংলাদেশের শহিদুল আলম অন্যতম। এটি ৫০টিরও বেশি জাহাজ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে একটি বড় জাহাজ এবং ১০টি ছোট নৌকা রয়েছে।
গ্লোবাল মিডিয়া ফ্লোটিলাতে যোগদান প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, ‘এই মুহূর্তেই গণহত্যা চলছে। ইসরায়েল এবং আমেরিকা একসাথে ফিলিস্তিনে, গাজায় মানুষকে খুন করছে। তার সাথে পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশ যুক্ত, তারাও সহযোগিতা করছে এবং তারাও এতে অংশীদার। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক মানুষ– সারা পৃথিবীর মানুষ এর প্রতিবাদও করছে। এই প্রতিবাদের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে আমি আগামীকাল মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিতে যাচ্ছি। আমি যাচ্ছি বাংলাদেশের প্রথম একজন, কিন্তু আমি মনে করি বাংলাদেশের সকল মানুষের ভালবাসা আমি সাথে নিয়ে যাচ্ছি। এই সংগ্রামে শুধু আমাদের থাকতে হবে না, এতে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে মানবজাতি পরাজিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতদূর জানি এর আগে কোনো বাংলাদেশি এই ফ্লোটিলায় যাননি। এই মিডিয়া ফ্লোটিলাতে কারা কারা আছে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আমার জানামতে, সম্ভবত এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হচ্ছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এরইমধ্যে ৪৪টি দেশের কথা বলা হয়েছে, এখন ৪৫টি দেশ হবে। সঠিক সংখ্যাটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তবে আমি যেটা বলছি সেটি এখন ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র সাথে যুক্ত হবে, যেটি ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’, একটি বড় নৌকা। এর সাথে ছোট আরও ১০টি নৌকা থাকবে।’
দৃক, যা বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে। ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। শহিদুল আলম তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসা ও সংহতি গাজার জনগণের কাছে পৌঁছানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
গ্লোবাল সুমুদ মিডিয়া ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, সাবেক বার্সেলোনা মেয়র আডা কোলাউ, ইতালির সংসদ সদস্য ও ইউরোপীয় সংসদের সদস্যরা রয়েছেন। এই ফ্লোটিলা ইতিমধ্যে গ্রীসের কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং গাজা অভিমুখে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
শহিদুল আলমের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গাজার জনগণের প্রতি সংহতি ও সমর্থনের একটি শক্তিশালী বার্তা। দৃকের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন গাজার জনগণের কাছে পৌঁছানোর এই প্রচেষ্টা মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
গাজার জনগণের প্রতি এই সংহতি ও সমর্থন বিশ্বমঞ্চে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যমে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে দৃঢ় করবে।