মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ছয়টি দেশে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার ও ইয়েমেনে একের পর এক হামলায় অন্তত ২০০ জন নিহত এবং এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গাজা আগ্রাসনের ৭০২তম দিনে ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ১৪ জন নিহত হন ত্রাণ সংগ্রহের সময়। পরদিন আরো ৮৩ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। একইদিন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় বেকা ও হারমেল জেলায় হামলা চালায়। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্রের গুদাম ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। লেবাননের পাশাপাশি সিরিয়ার হোমসের একটি বিমানঘাঁটি এবং লাতাকিয়ার সামরিক ব্যারাকে বিমান হামলা চালানো হয়। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানায়।
৯ সেপ্টেম্বর রাতে তিউনিসিয়ার সিদি বো সাইদ বন্দরে নোঙর করা আন্তর্জাতিক সংহতি ফ্লোটিলা সংগঠনের প্রধান জাহাজ ফ্যামিলি বোটে একটি সন্দেহভাজন ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালায়। এতে জাহাজে আগুন ধরে যায়। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় হামাসের একটি অফিস ভবনে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এ ঘটনায় ছয়জন নিহত হন, যাদের মধ্যে রয়েছেন হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়ার ছেলে হুমাম, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হামাস জানিয়েছে, শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন। পরদিন বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ প্রদেশে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, যাতে ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৩৫ জন নিহত এবং ১৩১ জন আহত হন।
কাতারে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনালাপে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প হামলাকে অবিবেচনাপ্রসূত আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জানান যে তিনি বিষয়টি মার্কিন সেনাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, অথচ ইসরায়েল আগে কিছু জানায়নি। ট্রাম্প আরো বলেন, এমন এক মিত্র দেশের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে যারা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। নেতানিয়াহু জবাবে বলেন, হামলার সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য এসেছিল তাই তিনি তা কাজে লাগান। পরে আরেক দফা ফোনালাপে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলেও নেতানিয়াহু নিশ্চিত করতে পারেননি হামলা সফল হয়েছে কি না। হামাস পরে জানায়, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব ঐ হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহল এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কাতার বলেছে, এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। বাংলাদেশও ইসরায়েলের আগ্রাসনকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট পরিপন্থী এবং শান্তি প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনাকে নিরীহ মানুষের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্র তিন দিনে ছয় দেশে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল গাজা সংঘাতকে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।