যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজ্যান্টনে জন্ম নেওয়া কায়রান কাজী মাত্র ১৪ বছর বয়সে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পে তিনি কাজ করেছেন, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর কাছে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়। দুই বছর কাজ করার পর এখন কায়রান নিউ ইয়র্কের সিটাডেল সিকিউরিটিজে গ্লোবাল ট্রেডিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নতুন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে জানিয়েছেন, স্পেসএক্সে কাজ করার অভিজ্ঞতার পর তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে এবং অন্য এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশে নিজের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত।
কায়রান স্পেসএক্সে যোগ দেওয়ার আগে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কম বয়সী গ্র্যাজুয়েট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। স্টারলিংক বিভাগে তিনি এমন সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করেন যা স্যাটেলাইটের বিমকে সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছে দেয়। তার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বকে দেখায় যে আর্থিক খাতও প্রযুক্তি কোম্পানি এবং শীর্ষস্থানীয় এআই গবেষণাগারের সঙ্গে প্রতিভার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।
শীর্ষস্থানীয় এআই গবেষণাগার ও প্রযুক্তি কোম্পানি থেকে অফার থাকা সত্ত্বেও কায়রান সিটাডেল সিকিউরিটিজ বেছে নেন। কারণ সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক জটিলতা এবং দ্রুত ফলাফলের সমন্বয় রয়েছে। মহাকাশ প্রকল্প বা এআই গবেষণার তুলনায় কোয়ান্টিটেটিভ ফাইন্যান্সে প্রকৌশলীরা কয়েক দিনের মধ্যে প্রভাব দেখতে পারেন। কায়রান বলেন, “কোয়ান্ট ফাইন্যান্সে এআই গবেষণার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু ফলাফল অনেক দ্রুত পাওয়া যায়।”
স্পেসএক্সে তিনি প্রোডাকশন-ক্রিটিক্যাল সিস্টেমে অবদান রেখেছেন, নিশ্চিত করেছেন স্টারলিংক স্যাটেলাইটের বিম সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাচ্ছে। সিটাডেলে তিনি গ্লোবাল ট্রেডিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ওপর কাজ করবেন, যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কোয়ান্টিটেটিভ সমস্যা সমাধানের মিলিত কাজ হবে।
কায়রান দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত শিক্ষা ও ক্যারিয়ার সময়রেখাকে অগ্রাহ্য করেছেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি তৃতীয় গ্রেড থেকে সরাসরি কলেজে ভর্তি হন এবং ১০ বছর বয়সে ইন্টেল ল্যাবসে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন। ১৪ বছর বয়সে স্পেসএক্সে সবচেয়ে কম বয়সী কর্মী হিসেবে যোগ দিয়ে অসাধারণ কর্মজীবন শুরু করেন।
কায়রান কাজী জন্মগ্রহণ করেন প্লেজ্যান্টন, ক্যালিফোর্নিয়ায়, তাঁর বাবা-মা বাংলাদেশের। পরিবার মানিকগঞ্জের মুসলিম কাজী সম্প্রদায়ের। পিতা ছিলেন রসায়ন প্রকৌশলী, মা ছিলেন ওয়াল স্ট্রিটের এক্সিকিউটিভ। ডাক্তাররা কায়রানের অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা মাত্র দুই বছর বয়সে শনাক্ত করেন। তিনি মেনসা ইন্টারন্যাশনাল-এ যোগ দেন এবং ডেভিডসন ইনস্টিটিউটের ইয়ং স্কলার প্রোগ্রামের সদস্য হন। এটি তাঁর প্রতিভাবান কিশোর হিসেবে যাত্রার সূচনা করে।
এখন ১৬ বছর বয়সে কায়রান ম্যানহাটনে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে যাচ্ছেন। তাঁর নতুন কর্মক্ষেত্র তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে। এটি একটি ব্যক্তিগত অর্জনও বটে, কারণ এখন তিনি মায়ের গাড়ি চালানোর উপর নির্ভর থাকবেন না, যেহেতু তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।