রাজধানীর গুলশানে সাবেক মহিলা এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় কোটি টাকার চাঁদা আদায়ের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির সাবেক নেতা এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু নতুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠেছেন। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ৩৫ মিনিটের একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে অপু ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন।
ভিডিওতে জানে আলম অপু বলেন, গুলশানে টাকার ব্যাগ নেওয়া ছেলেটি তিনি। তিনি আরও বলেন, যেসব সমন্বয়করা এই চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলেন, তাদের পরিচয় ফাঁস করা হয়নি। অপু প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযান চলাকালীন সময়ে ডিসি-এসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে অফিসিয়াল প্রসেসে তারা কিভাবে পুলিশের সঙ্গে শাম্মীর বাসায় অভিযান চালিয়েছিলেন, সেই তথ্য মিডিয়ায় কেন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, ভোরবেলার অভিযানের সময় শাম্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যা তারা বুঝতে পেরেছিলেন। অপু আরও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, রাতের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করলে দেখা যাবে কে ফোন করেছিলেন, কার ফোন থেকে শাম্মী বাসা থেকে বের হয়েছেন।
তবে অপুর স্ত্রী কাজী আনিশা অভিযোগ করেছেন, ভিডিওটি জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১ আগস্ট সকাল ৭টা পর্যন্ত অপু ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। ওই সময় তাঁকে মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর গোপীবাগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বাসায় নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ভিডিও রেকর্ড করানো হয়। আনিশা অভিযোগ করেছেন, ‘অপুকে সাহায্যের নামে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করানো হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ভিডিওতে চাঁদাবাজির পেছনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদের ইসলাম নাম বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ভিডিওটি কাটছাঁট করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে এবং স্টেটমেন্ট নেওয়ার ১৪ দিন পর ছাড়া হয়েছে।
আনিশা বলেন, চার দিনের ‘রিমান্ডে’ রাখার সময় অপুকে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু নাম বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি জানান, এনসিপিকে চাপে ফেলতে অপুকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সমন্বয়কদের প্রতি কেন এমন রাগ, তিনি তা বুঝতে পারছেন না। আনিশা আরও বলেন, ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এনসিপি তার কাছে এসেছে, কিন্তু স্বার্থের কারণে দূরে সরে যাওয়া হয়েছে।
গত ১ আগস্ট গুলশানে শাম্মী আহমেদের বাসায় অভিযান চালিয়ে জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮ আগস্ট কারাগারে অপুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আনিশা বলেন, অপু জানিয়েছিলেন, “আমাকে তুলে নিয়ে ভিডিও করা হয়েছে, যেকোনো সময় তা প্রকাশ হতে পারে। কিছু করার থাকলে এখনই করো।” তিনি আরও বলেন, অপু চাঁদাবাজি করেননি এবং তার জীবনের প্রথম ভুল হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
ঘটনাটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কীভাবে একজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একই সঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ক এবং মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর জনগণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আইনজীবীরা সমালোচনা করছেন, এবং সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টি তীব্রভাবে আলোচিত হচ্ছে।