বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বৈধভাবে সিম ব্যবহার করার সুযোগ না থাকায় সরকার উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও শিবিরে অবৈধ সিম ব্যবহারের অভিযোগের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য বৈধ সিম বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
চলতি মাসেই মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চারটি অপারেটরকে নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম ধাপে ১০ হাজার সিম বিতরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আগামী ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন। বৈধ সিম বিতরণের আগে রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। সরকার প্রস্তাব করেছে, আলাদা নম্বর সিরিজ থাকবে এবং ১৮ বছরের বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য সিম দেওয়া হবে। নিবন্ধনের জন্য ব্যবহার করা হবে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর ‘প্রোগ্রেস আইডি’।
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে এতদিন সিম ব্যবহার বৈধ ছিল না। বাস্তবে দুই দেশের অপারেটরের সিম অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, শিবিরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করছে, আবার মিয়ানমারের সিম দিয়েও অপরাধমূলক কার্যক্রম চলছে।
২০২৩ সালে আগের সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য টেলিটক সিম বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন উদ্যোগে সরকারের লক্ষ্য, রোহিঙ্গাদের সঠিকভাবে শনাক্ত করার পরই সিম বিতরণ করা হবে। ডেটা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে সংরক্ষণ করা হবে।
অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ প্রদান করবে, যা খরচ বহন করবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। নতুন সিম বিতরণের পর অবৈধ সিমগুলো বন্ধ করা হবে। বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেছেন, “রোহিঙ্গাদের সঠিকভাবে শনাক্ত না করলে ক্যাম্পে সিম দেওয়া সম্ভব নয়। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা চলছে।”
গ্রামীণফোন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিসিএও তানভীর মোহাম্মদ বলেছেন, “এতে অনেক রোহিঙ্গা বৈধভাবে সিম ব্যবহার করতে পারবে।” রবি আজিয়াটার সিসিআর সাহেদ আলম বলেছেন, নিরাপত্তার কারণে অপারেটরদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলালিংকের করপোরেট প্রধান তাইমুর রহমান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন পরামর্শ দিয়েছেন, শিবিরকে বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে হবে এবং পুরোনো সিম জব্দ ও নথিভুক্ত করতে হবে।
সরকারের লক্ষ্য চলতি মাসেই পাইলট প্রকল্প শুরু করা এবং সফল হলে বড় পরিসরে রোহিঙ্গাদের জন্য বৈধ সিম বিতরণ করা হবে।