“দ্রোহে ছিনিয়ে নবপ্রভাত, মাতৃভূমি রাখিবো নিরাপদ” — এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের ১৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা মঞ্চে এই সম্মেলন শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক নূর আলম।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল। এছাড়াও বক্তব্য দেন ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বশির আহমেদ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা উদীচীর সভাপতি কে এম শরীফুল ইসলামসহ ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ছাত্র ইউনিয়নের মূল লক্ষ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা। অথচ আজ আমাদের সমাজে বিভেদ চরম পর্যায়ে। আমরা পড়াশোনা করছি জনগণের টাকায়, কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনবল তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের সততা ও দক্ষতা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।”
ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে ছাত্রদের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছে আমাদের কর্মী মাহমুদ হাসান রিজভী। আপনাদের সেই শহীদের সহযোদ্ধা হতে হবে। দুঃখের বিষয়, বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা ছাত্রদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসে না, বরং শোষণ বদলে যায় নতুন রূপে। গনঅভ্যুত্থান ছিল শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন কেউ কেউ এসে দাবি করছে আন্দোলনের নেতৃত্বের। এসব চক্রান্তে বিপ্লব দুর্বল হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা মানুষের অধিকার। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিভক্ত – মাদ্রাসা, কওমি, কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম ইত্যাদি নামে আলাদা ধারায় চলছে। আমরা চাই অভিন্ন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এবং শিক্ষাখাতে মোট জিডিপির অন্তত ৮ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।”
তিনি ইবি শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, “এই মৃত্যু রহস্যজনক। প্রশাসনকে অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।”
সমাপনী বক্তব্যে ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা এমন এক সময়ে সম্মেলন করছি যখন দুইদিন আগে সাজিদ আব্দুল্লাহ পুকুরে ডুবে রহস্যজনকভাবে মারা গেছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি সুষ্ঠু তদন্তের। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি গাফিলতি করে, তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলনে নামবো।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছর জুলাই বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যের অবসান ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠন। কিন্তু আজ আমরা দেখি মাজার ভাঙচুর, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের চেষ্টা, সামুদ্রিক বন্দর ইজারা conspiracy এবং মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে মধ্যপ্রাচ্যীয় যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা চলছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন সবসময় সোচ্চার থাকবে।”