বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব তাদের কনটেন্ট মনিটাইজেশন নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে অন্যের তৈরি পুরোনো ভিডিও বা রেডিমেড কনটেন্ট ব্যবহার করে আর অর্থ আয় করা যাবে না। ইউটিউব স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনো ভিডিওতে মৌলিকতা না থাকলে তা ‘ইনঅথেন্টিকেটেড কনটেন্ট’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে ধরনের ভিডিও থেকে অর্থ আয়ের সুযোগ থাকছে না।
এই নতুন নিয়ম চালুর লক্ষ্য একটাই— বিশ্বব্যাপী ইউটিউব কনটেন্ট নির্মাতাদের সৃজনশীল ও মৌলিক কাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়া। এতদিন অনেকেই সামান্য সম্পাদনা বা অডিও যোগ করে, কখনো বা এক ভিডিও বারবার ঘুরিয়ে পোস্ট করে অর্থ উপার্জন করতেন। এবার সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিল ইউটিউব।
তবে ইউটিউব জানিয়েছে, ‘রিইউজড কনটেন্ট’ যেমন ব্যাখ্যাসহ ভিডিও, কম্পাইলেশন, বা ক্লিপ রিক্রিয়েশন এখনো মনিটাইজেশনের আওতায় থাকবে, তবে অবশ্যই সেই ভিডিওতে নতুন কিছু যোগ থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা, যারা মূলত রেডিমেড ভিডিওতে ভর করে আয় করতেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক সৌম্যক সেনগুপ্ত বলেন, “এই পদক্ষেপ কনটেন্টের মান বাড়াবে। ইউটিউব আগে থেকেই বলেছিল তারা মৌলিক নির্মাতাদের পক্ষে থাকবে। এবার তা কার্যকরভাবে প্রমাণ করল।”
এই পরিবর্তন নিয়ে নির্মাতাদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র হলেও, বেশিরভাগই এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। জনপ্রিয় শেফ ও ইউটিউবার মীত প্যাটেল বলেন, “এখন আর সহজপথে আয় করা যাবে না। যারা মৌলিক কনটেন্ট তৈরি করেন, তাদের জন্য এটা আরও ভালো সুযোগ।”
কলকাতার জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিরঞ্জন মণ্ডলও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটা কনটেন্টের ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে। যারা শুধু কপি করতেন, তারাও এবার নিজেদের কিছু ভাবতে বাধ্য হবেন। এটা তাদের জন্যও এক নতুন সুযোগ।”
এদিকে ইউটিউব আরও জানায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওতেও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। ভিডিও যদি এআই নির্ভর হয়, তবে সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। তবে ভিডিওর মান বাড়াতে এআই ব্যবহারে কোনো বাধা নেই।
বিশ্বব্যাপী ভিডিও কনটেন্ট জগতে এই সিদ্ধান্ত এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইউটিউবের এই নতুন নীতি যেমন সহজ উপায়ে অর্থ আয় করার পথ রুদ্ধ করবে, তেমনি যারা সত্যিকার অর্থে সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে নতুন ভিডিও বানান, তাদের জন্য খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দরজা।