বাংলাদেশী রোগীদের জন্য চীনের কুনমিংয়ে সাশ্রয়ী ও উন্নত চিকিৎসার নতুন দিগন্ত - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
‘এক কিডনির গ্রাম’– বাংলাদেশ থেকে ভারতে অঙ্গ পাচারের ভয়াবহ চিত্র গোপালগঞ্জে এনসিপি কর্মসূচিতে ভয়াবহ হামলা, সেনা-পুলিশের হস্তক্ষেপেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি পরিস্থিতি ইসির ওয়েবসাইটে নেই ‘নৌকা’ প্রতীক তারবিহীন বিদ্যুৎ আর কল্পবিজ্ঞান নয়, বাস্তব হলো টেসলার স্বপ্ন বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব দরবারে “কর্মঠ”: অ্যাকাউন্টিঙে বাজিমাত গাজী জিশানের আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ভুয়া ফটোকার্ডে ভুগছে গণমাধ্যম, পথ দেখাচ্ছে সাবাস বাংলাদেশ এর স্মার্ট ফটোকার্ড  আসিফ আদনানদের নামে জিহাদি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা: আবারও জঙ্গী কার্ড? ভাড়ার তর্কে ইবি ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ, জনি পরিবহনের বাস আটক টিটিপি সংশ্লিষ্টতার ধুয়ো তুলে ইসলামপন্থী যুবকদের মামলা-গ্রেফতার হয়রানি: জঙ্গী নাটকের নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশী রোগীদের জন্য চীনের কুনমিংয়ে সাশ্রয়ী ও উন্নত চিকিৎসার নতুন দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৪ বার দেখা হয়েছে

ঢাকা থেকে মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টার ফ্লাইট দূরত্বে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং এখন বাংলাদেশের রোগীদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চিকিৎসার নতুন গন্তব্য হিসেবে। উন্নত প্রযুক্তি, উচ্চমানের চিকিৎসা সুবিধা এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী খরচের কারণে ভারত, থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি রোগীদের নজর এখন কুনমিংয়ে। বিশেষ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং নিউরো রোগের উন্নত সেবা দিতে সক্ষম এই শহরটিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন আশার আলো।

২০২৪ সালের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর ভারতে বাংলাদেশিদের ভিসা কঠোর হওয়ায় চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাত্রার প্রধান গন্তব্য পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখনই চীন সরকার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য কুনমিংয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশের রোগীদের জন্য নতুন বিকল্প হয়ে ওঠে কুনমিং। গত মার্চে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কুনমিং সফর করে। এই দলে ১৪ জন রোগী, তাদের পরিবার, ডাক্তার, ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা ছিলেন। এরপর জুনে প্রথম ব্যাচের চিকিৎসা শুরু হয় ইউনানের ফুয়ই কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতালে।

প্রথম ব্যাচের রোগীদের মধ্যে পাবনার মো. রিপন এসেছিলেন হৃদরোগে আক্রান্ত ৮ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে উন্নতি না হওয়ায় তিনি চীনে যান। একইভাবে কিশোরগঞ্জের সুচন্দা দাস ১৪ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে এবং নিকলির সেলিনা আক্তার ছেলে সাজিদকে নিয়ে কুনমিংয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। এদের সবাইকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয় এবং সব খরচ বহন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু হৃদরোগ নয়, ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কুনমিংয়ে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আরিফিন ইসলাম জানিয়েছেন, এখানে চিকিৎসা খরচ বাংলাদেশের প্রাইভেট হাসপাতালের মতো হলেও সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের। সরকারি হাসপাতালে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ফি মাত্র ১৫ ইউয়ান (প্রায় ২৬০ টাকা)। এমনকি জটিল স্পাইন সার্জারিও সম্পন্ন হচ্ছে মাত্র ১০,০০০ ইউয়ান (প্রায় ১,৭৫,০০০ টাকা) খরচে। তবে চিকিৎসা শুরুর আগে ডিপোজিট হিসেবে দিতে হয় ১০,০০০ ইউয়ান, যা চিকিৎসা শেষে অতিরিক্ত থাকলে ফেরত দেওয়া হয়।

এদিকে বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, ভাষা সমস্যা বড় বাধা নয়। কারণ, কুনমিংয়ে এখন প্রায় ২,০০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। তাদের দোভাষী হিসেবে নিয়োগের উদ্যোগ চলছে। রোগী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে এই সমস্যা আরও সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এমনকি ঢাকায় চীনা হাসপাতালগুলোর সার্ভিস সেন্টার খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

ফুয়ই ইউনান কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক সু হেং জানান, প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষের ইকোকার্ডিওগ্রাম সম্পন্ন হয় এই হাসপাতালে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশি রোগীদের জন্যও বিমা সুবিধা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। চিকিৎসাসেবার মান, প্রযুক্তি ও লজিস্টিক সাপোর্টের দিক দিয়ে চীন ভারত-থাইল্যান্ডের চেয়েও এগিয়ে বলে মন্তব্য করেছেন মেডিকেল ট্যুরিজম সংস্থা ট্র্যাক মেডি সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান।

মেডিকেল ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান সিওক হেলথকেয়ারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এম এম মাসুমুজ্জামান জানিয়েছেন, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং নিউরো রোগের ক্ষেত্রে চীনের চিকিৎসা খরচ কম এবং মান ভালো। তবে সিরিয়াল এবং ভাষা সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।

চীন সফরকালে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম কুনমিংয়ের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, “চীনে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা শুরুর মাধ্যমে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।”

কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন স্কুলের ডিন লাই ইয়াজিয়ে এই উদ্যোগকে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বাস্তবসম্মত বিকল্প বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্যও এই শহর সম্ভাবনাময় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাষা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দক্ষ দোভাষী, দ্রুত সিরিয়াল পাওয়া এবং ভিসা প্রসেসিং সহজ করা গেলে কুনমিং বাংলাদেশের রোগীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় চিকিৎসাকেন্দ্র হয়ে উঠবে। এরইমধ্যে ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান, ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ফুওয়াই ইউনান হসপিটাল ও ট্রাডিশনাল চাইনিজ মেডিকেল হসপিটালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয় বিদেশে চিকিৎসার জন্য। এর বড় অংশই যায় ভারত-থাইল্যান্ডে। এখন কুনমিংয়ের এই নতুন উদ্যোগ বাংলাদেশের রোগীদের বিদেশে চিকিৎসার খরচ কমানোর পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একটি নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ যদি সফলভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে ভারত-থাইল্যান্ড ছাড়াই চীন হবে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার নতুন প্রধান ঠিকানা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT