বাংলাদেশের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঘিরে ভয়াবহ এক অপরাধচক্রের মুখোশ খুলে গেল। এ তথ্য সামনে আনলেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনায়েন সায়ের।
জানা যায়, নিজেদের ‘অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ’ পরিচয় দেওয়া হ্যাকার সংগঠন গত সপ্তাহে তাঁর কাছে একটি ভিডিও পাঠায়। ভিডিওটিতে ভয়ংকর সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কিছু পাইলট, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
জুলকারনায়েন সায়ের তাঁর ফেসবুক পোস্টে জানান — “নিজেদের হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ দাবি করে গত সপ্তাহে আমার কাছে এই ভিডিওটি পাঠানো হয়। এখানে উত্থাপিত বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে আমি তাঁদের কিছু প্রমাণ দিতে বলি। তাঁরা আজ আমাকে উল্লেখযোগ্য কিছু স্পর্শকাতর তথ্য প্রমাণ হিসেবে পাঠায়, যার সঠিকতা আমি যাচাই করেছি। ভিডিওতে প্রদত্ত সকল মতামত অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথের, জনগুরুত্ব বিবেচনায় কোনো রকম পরিমার্জনা ছাড়াই বার্তাটি প্রকাশ করা হলো।”
এরপরই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও বার্তায় অ্যানোনিমাস জানায়, তারা দীর্ঘ এক বছর ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভেতরে সংগঠিত অপরাধ, নারী নির্যাতন, ব্ল্যাকমেইল এবং স্বর্ণ পাচারের চক্র নজরে রেখেছে। সংবাদ শিরোনাম কিংবা সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে নয় — তারা সরাসরি বিমানের ককপিট, গোপন ইমেইল ইনবক্স এবং ব্যাংক হিসাব থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই চক্রের কিছু পাইলট বছরের পর বছর নারী সহকর্মীদের হয়রানি, ব্ল্যাকমেইল এবং যৌনপেশায় বাধ্য করেছে। মাদক খাইয়ে অচেতন করে ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, এই অপরাধীরা অনেক নারীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেছে।
শুধু তাই নয় — এই পাইলট ও কর্মকর্তারা বিমানের ফ্লাইট ব্যবহার করে কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ পাচার করেছে। এ কাজে বিমানের নিরাপত্তা কর্মী, ইউনিয়ন নেতা, অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিজি এফ আই ও এনএসআই-এর অসাধু কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত।
অ্যানোনিমাসের দাবি, তাদের হাতে রয়েছে পাচারের ফ্লাইট তালিকা, সংশ্লিষ্ট পাইলট ও কুরিয়ারের নাম, কোন গেট দিয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে — সবকিছু। এমনকি অভিযুক্তদের ব্যাংক হিসাব, হোটেল বিল, সিক্রেট ব্যবসা, এনক্রিপ্টেড ডাটা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্যও তারা সংগ্রহ করেছে।
এই অপরাধচক্র বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল অ্যাভিয়েশন) ভেতরেও ছড়িয়ে আছে। অবৈধভাবে পাইলট লাইসেন্স অনুমোদন, সতর্কবার্তা উপেক্ষা এবং যাত্রীদের জীবন নিয়ে অপরাধীদের রক্ষা করা হয়েছে।
অ্যানোনিমাস জানায় — এই চক্রের শিকার নারীরা একা নন। তাদের জন্য বার্তায় বলা হয়: ‘তোমাদের নীরবতা ছিল সম্মতি নয়। তোমাদের যন্ত্রণা ছিল অদৃশ্য নয়। আমরা আছি, এবং এই সত্যই হবে তোমাদের মুক্তির হাতিয়ার।’
সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে অ্যানোনিমাস জানায়, ‘আপনারা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, তবে এটাই শেষ পরীক্ষা। বিমানের অভ্যন্তরে সক্রিয় এই অপরাধচক্রকে নির্মূল করতে হবে। সব পাইলট, কর্মকর্তা, ইউনিয়ন নেতা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি তারা জানায় — “আমরা তোমাদের নাম জানি, ঠিকানা জানি, ব্যাংক হিসাব জানি, প্রেমিকা জানি, এনক্রিপ্টেড ব্যাকআপ জানি। এখন পালানোর কোনো পথ নেই। তোমরা যত গেট পার হতেই চাও, আমরা আগে থেকেই অপেক্ষা করছি। তোমাদের পতন অবশ্যম্ভাবী।”
অবশেষে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে অ্যানোনিমাসের বার্তা — ‘এই পাইলটরা তোমাদের রক্ষক নয়। তারা দেশদ্রোহী শিকারি। তোমাদের পরিবার, মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। এক সময় তোমরা স্বৈরাচারীদের হটিয়েছিলে, এবার আকাশের নেকড়েদের নামিয়ে আনো।’
এই প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সচেতন নাগরিকরা দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।