সালাতুল ইস্তিসকা আয়োজন করলে চাপ আসত ভারত থেকে - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
কোটায় ভর্তি প্রসঙ্গে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শর্ত আরোপ রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে গরুবাহী একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে উল্টে দুই ব্যবসায়ী নিহত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল আগামীকাল রোববার বিসিবির নতুন সভাপতি – আমিনুল ইসলাম বুলবুল ঈদ-পরবর্তী ঢাকামুখী যাত্রীদের জন্য শুরু হয়েছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি এক মাসের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’ উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়লো কুয়াকাটার ‘মেরিন ড্রাইভ’ জাপান থেকে বাংলাদেশকে ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা, রেলপথ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের চুক্তি ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হুতিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বন্ধ ছিল বিমান চলাচল দক্ষিণ কোরিয়ায় আগাম ভোটে রেকর্ড, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে তীব্র উত্তেজনা

সালাতুল ইস্তিসকা আয়োজন করলে চাপ আসত ভারত থেকে

এ বি যুবাইর
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৩৩ বার দেখা হয়েছে
সালাতুল ইস্তিসকার আয়োজন করলে চাপ আসত ভারত থেকে

ইদানীং গরম পড়ছে বেশ।

হাসিনার আমলের একটা ঘটনা মনে পড়ছে—

গতবছর এমন দিনেও প্রচন্ড গরম পড়ছিলো, বিভিন্ন জায়গায় মানুষজন বৃষ্টির আশায় সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করছিলেন। আমরাও চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সালাতুল ইস্তিসকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে। আয়োজনও করেছিলাম। ইমামতি করার জন্য দাওয়াত দিয়েছিলাম প্রফেসর মুখতার আহমেদ স্যারকে৷ সবকিছু ঠিকঠাক। হঠাৎ আগের দিন রাত ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে তলব পড়ে আমার।

“তুমি তো বেয়াদব আছো বেশ! তুমি বুঝো এটা নিয়ে কত ঝামেলা হচ্ছে? ভারত থেকে চাপ আসছে তোমাদের এই পাগলামির জন্য! ঢাবিকে তোমরা মৌলবাদী বানায়ে ফেলতেছো দিন দিন! এর আগেও তোমরা বটতলায় কোরআন তেলাওয়াত করছো।”

— ইমাউল হক টিটু, সহকারী প্রক্টর,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ইমাউল হক টিটু ফোন দিয়েছেন। “তোমাকে ক্যাম্পাসে আসতে হবে এখন”। বললাম স্যার আমি তো হলে থাকি না। এতো রাতে কিভাবে আসবো? বললেন “যেখানেই থাকো, ক্যাম্পাসে আসো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে তোমার সাথে কথা বলবো আমি”। কি আর করার! বন্ধু আবদুর রহমান, মাহমুদ, শেখ তাওহীদ সহ কয়েকজনকে নিয়ে গেলাম ক্লাবে৷ গিয়ে দেখি তিনি সহ আরো ৬-৭ জন বসে আছেন আমাদের অপেক্ষায়। সবাইই সহকারী প্রক্টর বিভিন্ন জোনের৷

যেতেই জেরা শুরু করলো। আমি কোন সংগঠনের? কার কথায় এসব করছি, কে আমাদের দিয়ে করাচ্ছে এইসব প্রশ্ন। বললাম স্যার আমরা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরাই আয়োজন করছি। কোনো সংগঠন থেকে না। আর কেউ করাচ্ছেও না আমাদের দিয়ে।

আমার সামনেই আমার ডিপার্ট্মেন্টের চেয়ারম্যান স্যারকে ফোন দিলেন৷ “আপনার স্টুডেন্ট এসব করছে আপনি জানেন?” স্যারকেও রীতিমতো ধমক দিচ্ছিলেন! “নিন, ওর সাথে কথা বলেন। এসব বন্ধ করতে বলেন এক্ষুনি”। স্যার বাধ্য হয়ে আমাকে বললেন, “আমার কিছু করার নেই যুবায়ের। বন্ধ করতে হবে বাবা!”

ফোন রেখে দিলো। তাদেরকে রিকোয়েস্ট করলাম স্যার, সবকিছু আয়োজন করে ফেলেছি। সবাইকে দাওয়াতও দিয়ে দিয়েছি। এখন হঠাৎ বাদ দেই কিভাবে?

বললো, “ঠিক আছে তাহলে কোনো একটা মসজিদে গিয়ে কর। পাবলিক প্লেসে খোলা জায়গায় করতে পারবা না। অল্প কয়েকজন নিয়ে মসজিদে গিয়ে পড়ে আসো”। বললাম স্যার এই নামাজ তো খোলা জায়গায়-ই আদায় করতে হয়, এটাই নিয়ম। “না, বাইরে অনেক রোদ, অনেক গরম। এর মধ্যে নামাজ পড়লে শিক্ষার্থীরা হিটস্ট্রোক করবে।” বললাম স্যার এই নামাজটা পড়াই হয় গরম থেকে বাঁচতে। যাতে আল্লাহ রহমতের বৃষ্টি দান করেন।

“তুমি তো বেয়াদব আছো বেশ! তুমি বুঝো এটা নিয়ে কত ঝামেলা হচ্ছে? ভারত থেকে চাপ আসছে তোমাদের এই পাগলামির জন্য! ঢাবিকে তোমরা মৌলবাদী বানায়ে ফেলতেছো দিন দিন! এর আগেও তোমরা বটতলায় কোরআন তেলাওয়াত করছো। ওইটা নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আমাদেরকে। এতো দুঃসাহস কেন তোমার? তোমার জন্য এসব চাপ আমরা নিতে পারবো না। ভালোয় ভালোয় পড়াশোনা শেষ করে ভার্সিটি লাইফ শেষ কর। বহিষ্কার করে দিলে কিন্তু কিছু বলতে পারবা না! না মানে না। এটাই আমার শেষ কথা। এরপরও যদি কিছু করতে চাও আমি পুলিশ ডেকে পে’টাবো তোমাকে। দেখি তুমি কী করতে পারো! কর তোমার যা খুশি”

এরপর আমাদের সবার আইডি কার্ডের ছবি তুলে রাখলেন। বাড়ির ঠিকানা, পিতামাতার তথ্য সহ সবকিছু লিখে রাখলেন। আমরা বের হয়ে আসি।

পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি এক সিনিয়র ভাই ফোন দিয়েছেন কয়েকবার। উনি ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা ছিলেন। কিন্তু কোন এক কারণে আমার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো। স্নেহ করতেন আমাকে। ফোন ব্যাক করলাম।

“যুবায়ের কই তুই?” ক্যাম্পাসে আছি ভাই। “তুই এক্ষুনি ক্যাম্পাস ছাড়। কয়েকদিন এদিকে আসিস না আর। ঝামেলা হইসে।”

বললাম কী ঝামেলা ভাই?

“ইনান (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাই তোরে খুঁজতেছে। কয়েকজনের কাছে খোঁজ করছে তোর ব্যাপারে৷ তুই নাকি কিসের নামাজ আদায়ের আয়োজন করতেছোস? তোর হলে, ডিপার্ট্মেন্টে লোক পাঠাইসে। সরে যা কোথাও। দূরে থাক কয়েকদিন।”

ওনার কথামতো চলে গেলাম ক্যাম্পাস ছেড়ে। যেই বাসায় থাকতাম সেখানে না, আরেক বন্ধুর বাসায়। ক্যাম্পাসে আর ঢুকতে পারিনি কয়েকদিন। ইনানও আর পায়নি। পেলে হয়তো খারাপ কিছু হতে পারতো৷ যাইহোক, আল্লাহ সেফ করেছেন। তবে সালাতুল ইস্তিসকা আর আদায় করতে পারলাম না।

কেমন সব দিন ছিলো আমাদের!!

সুত্র: এ বি যুবাইরের ফেসবুক পোস্ট

সমন্বয়ক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT